ঢাকায় নিখোঁজ এক বিএনপি নেতার বাসায় গিয়ে ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যদের ‘হট্টগোলে’র মুখে পড়ার ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ওই সংগঠনের সদস্যরা অনির্ধারিতভাবে রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ওই ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানানো পর বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রদূতের অসন্তোষ প্রকাশের বিষয়ে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এই অস্বাভাবিক ঘটনায় কিছুটা ঘাবড়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত। তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তবে তিনি চাইলে তাকে অধিক নিরাপত্তা দেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
জানা যায়, মায়ের কান্না সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করলে আমেরিকান কর্মকর্তারা ঘাবড়ে যান। বৈঠক শেষ না করেই প্রোটোকল কর্মীদের সহযোগিতায় দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করে সোজা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলে যান রাষ্ট্রদূত। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন।
পিটার ডি হাস ২০১৩ সালে বিএনপির নিখোঁজ নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের শাহীনবাগের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অবস্থান করেন প্রায় ২৫ মিনিট। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
পিটার হাস যখন সুমনের বাসায় যান, সে সময় সেখানে উপস্থিত হন আরও একটি সংগঠনের সদস্যরা, যারা জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৭ সালে বিমান বাহিনীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের শাস্তির দাবি করেন।
সে সময় সেনা ও বিমান বাহিনীর নিখোঁজ সদস্যদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে দেয়া স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করে। এতে ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আজকে হঠাৎ করে জরুরি ভিত্তিতে আমার সঙ্গে দেখা করেন। আমার সঙ্গে দেখা করে আমাকে উনি বললেন, উনি একটি বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে অনেক লোক ছিল। উনি গিয়েছিলেন একটি বাসায়। কিন্তু বাইরে অনেক লোক ছিল।
‘তারা উনাকে একটা কিছু বলতে চাচ্ছিল। উনার সিকিউরিটির লোকরা উনাকে বলেছে, আপনি তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যান। এই লোকরা আপনার গাড়ি ব্লক করে দেবে। তিনি তখন তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যান। এই ঘটনায় উনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।’
মোমেন বলেন, আমি উনাকে বললাম, আপানার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের। আপনার ওপর বা আপনার লোকদের ওপর কেউ আক্রমণ করেছে? উনি বললেন, ‘না’। তবে উনার গাড়িতে হয়তো দাগ লেগেছে। তবে উনি শিওর না।
“আমি বললাম আপনার এবং আপনার লোকজনকে আমরা নিরাপত্তা দেব। আপনি আরও অধিকতর নিরাপত্তা চান আমরা দেব। তবে আপনি যে ওখানে গেছেন, এই খবরটা কে প্রকাশ করল, আমরা তো জানি না। আমরা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছুই জানি না। আপনারা আমাদের কিছুই জানাননি। আপনি ওখানে যাবেন, এই তথ্যটা লিক করল কে। উনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।”
মোমেন বলেন, ‘আমি তাকে আবার বলেছি, আপনার নিরাপত্তা দেব। কিন্তু আপনি বের করেন আপনার যাওয়ার খবরটা কে বের করল। উনি দুশ্চিন্তায় আছেন। আমি উনাকে বলেছি, আমাদের মিডিয়া খুবই সোচ্চার। তারা যে কোনো কিছুর পেছনে লেগে থাকে। তাদের আমি বাধা দিতে পারব না। কারণ আমাদের দেশে ফ্রিডম অব মিডিয়া খুবই স্ট্রং। তবে আমি তাদের ডিস্টেঞ্জ রাখতে পারব। ১০ ফুট, ১৫ ফুট।
‘আমাদের ওখানে লোকজন গেছে সেটাও আমি বাধা দিতে পারব না। তবে কেউ যদি আপনার ওপর আক্রমণ করে, সম্পদ ধ্বংস করে আমি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব। আপনার থেকে সবাইকে দূরে রাখতে পারব।’