স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির হাতেই রাখতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ গৌরবময় মহান বিজয় দিবসের ৫১তম বর্ষপূর্তি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামজিক ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি একাত্তরের রণাঙ্গণে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাত্র নয় মাসে ছিনিয়ে এনেছিল গৌরবময় এই বিজয়। একদিকে ছিল স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে নতুন দিনের স্বপ্ন। ত্রিশ লক্ষ শহীদের তাজা রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের মাত্র চার বছরের মধ্যে বাঙালির হৃদয়স্পন্দন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হন। বাংলাদেশ হয়ে পড়ে অভিভাবকশূণ্য। শুরু হয় সেনাশাসন। জাতীয় চার নেতাসহ বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের বাছবিচারহীনভাবে হত্যা করা হয়। জারি করা হয় ইনডেমনিটি। সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের মদদে রাজনীতিতে দেশ বিরোধীদের অভিষেক ঘটানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জনতাকে নানা ধারায় বিভক্ত করার অপচেষ্টা চলে এক দশক ধরে। মাঝে স্বৈরশাসক এরশাদ এসে সুকৌশলে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম যুক্ত করে সাংবিধানিকভাবে এই বিভক্তিকে আরও ত্বরান্বিত করেন। অবশেষে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শেষ হয় তার অপশাসন।

কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসেন বেগম খালেদা জিয়া। ক্ষমতা স্থায়ী করতে তিনি ১৯৯৬ সালে একটি জালিয়াতির নির্বাচনের আয়োজন করেন। দেশের মানুষকে নিয়ে তাকে প্রতিহত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে গ্রহণ করেন দেশের শাসনভার। তাঁর শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা খাতে সংস্কার, সামাজিক নিরাপত্তার উন্নতি, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তিও অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয় তাঁর শাসনামলে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে। শেষ হয় বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের উন্নয়নের পাঁচ বছর। জনগণের ভোটের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী খালেদা জিয়ার হাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিএনপি ক্ষমতায় এসেই দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটাল, দ্র্ব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়ে উঠল নিত্য দিনের ঘটনা, কৃষক চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত সার পেল না। অবশেষে ব্যর্থ খালেদা সরকার ১৯৯৬ সালের মতো আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের চেষ্টা করল। দেশ চলে গেল অঘোষিত সেনাশাসনে। অবশেষে, দেশের জনগণের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের শাসনভার গ্রহণ করলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশে শুরু হলো অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছেন। সম্প্রতি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। পদ্মা সেতু এখন বাস্তব, ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হবে স্বপ্নের মেট্রোরেল, গৃহহীনরা বাড়ি পাচ্ছেন, অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। দীর্ঘ অবহেলা আর নিরাশার ঘোর নিমজ্জিত বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ।

universel cardiac hospital

তবে, সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনা, অতিধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি, সম্পদের অসম বন্টন, প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মচারীর স্বেচ্ছাচারী আচরণ, কিছু কিছু প্রকল্পে অসামঞ্জস্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার সরকারের সব অর্জনকে যেন প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এছাড়া, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশে ও দেশের বাইরে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এমতাবস্থায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রকৃত দেশপ্রেমিক তথা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির হাতেই রাখতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব। মহান বিজয়দিবসে এই হোক আমদের অঙ্গীকার।

শেয়ার করুন