বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ১৯৭১ সালে আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম তাঁরা কেউ যে বেঁচে ফিরব, এমনকি দেশটা যে স্বাধীন হবে এ ব্যাপারেও কেউ নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যিনি এই দেশকে সৃষ্টি করার জন্য আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তাঁকেই আমরা হত্যা করেছি এবং যে জয় বাংলা স্লোগানকে হাতিয়ার করে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম, সেই স্লোগানকেও পরিত্যাগ করি।
আজ শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস ২০২২ উপলক্ষে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার শীর্ষক আলোচনা সভা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যগণের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের পক্ষে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপিকো সংবর্ধনা স্মারক প্রদান করা হয়।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, যারা জয় বাংলা বলে না, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সে যদি আমি মুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীও যদি জয় বাংলার বিরুদ্ধে বলি, তাহলে বুঝতে হবে- আমি আন্তরিকতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যায় নাই। কারণ জয় বাংলা ও মুক্তিযুদ্ধ আঠার মতো লেগে আছে, একটা থেকে আরেকটাকে আলাদা করা যায় না। সুতরাং আসুন আমরা নিজদেরকে জয় বাংলার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু যে দেশটা আমাদেরকে দিয়ে গেছেন, সেই দেশটাকে আমরা রক্ষা করি।
প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,
শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস।’ আমাদেরকে এই কথাটি মনে রাখতে হবে। ষড়যন্ত্র যারা করে তারা কিন্তু এখনও তৎপর, আমি বলব- যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি তারাও ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। একটি সুন্দর দেশ গঠনের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে প্রয়াস চলছে, যে আন্দোলন চলছে সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নাগিনীদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমাদের বিভ্রান্তির কারণে বা আমাদের পরাজিত মনোভাবের কারণে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেই, আমরা সবাই মনে করেছি আমরা পরাজিত হয়েছি এবং তখন আমরা আত্মসমর্পণ করেছি তাদের কাছে; আমি এই কথা সংসদেও বলেছি। এই শহরে ইসলামী সম্মেলনের নামে পাকিস্তানি ভাবধারা পূনর্বাসনের জন্য প্রথম যারা সভাসমাবেশ করেছিল তারা আওয়ামী লীগার! ইসলামি ভাবধারার বিরুদ্ধে আমরা কেউ না। আমার ধর্ম ইসলাম, আমি ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু তথাকথিত ইসলামি ভাবধারার নামে পাকিস্তানি ভাবধারার পুনর্বাসন যারা করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এই দেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, এটি বাঙালিদের দেশ। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, বাঙালি ও অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী যারা এই ভূখণ্ডে আছেন আমরা সকলে মিলেই এ দেশটাকে গঠন করব।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে, বলতে হবে যে, ১৯৭১ সালে এই দেশে একটা যুদ্ধ হয়েছিল এবং যুদ্ধটা হয়েছিল পাকিস্তানকে বিরুদ্ধে। কেন পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ হয়েছিল? কারণ পাকিস্তান এই দেশটা দখল করে রেখেছিল। তারা আমাদেরকে পদপৃষ্ঠ করছিল। তাদের এই শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়েছিল; সেই বিদ্রোহের যিনি ডাক দিয়েছিলেন, যিনি ঐ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।