চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে রাস্তায় নগ্ন করে মারধর, ভিডিও ভাইরাল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

মধ্যবয়সী এক ব্যক্তিকে নগ্ন করে রাতের বেলা রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েক যুবক। তারা উল্লাস প্রকাশ করে হাততালি দিচ্ছেন। পেছন থেকে মারপিটও করছেন কেউ কেউ। এক হাত দিয়ে লজ্জাস্থান ঢেকে অন্য হাতে বারবার চোখ মুছছেন ওই ব্যক্তি। কান্নার আওয়াজও শোনা যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৩ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল শনিবার রাতে ফুটেজটি পুলিশের হাতে এসেছে। পুলিশ ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গতকাল রাতেই তিনজনকে আটক করেছে।

universel cardiac hospital

ভুক্তভোগী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় আজ রোববার সকালে মারধর, চাঁদা দাবি ও পর্নোগ্রাফি আইনে সাতজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন তিনি। পুলিশ আটক তিনজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন পৌর এলাকার বটতলাহাট এলাকার মো. সোহাগ (২৮), কালীগঞ্জ বাবুপাড়ার মো. আনাস (২৭) ও জয়নগর মীরপাড়ার মো. সাকিল (৩২)।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আলমগীর জাহান বলেন, ভিডিও ফুটেজটি বিশ্লেষণ করে পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করে। আজ সকালে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী থানায় মামলা করলে তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে জয়নগর মীরপাড়ার রায়হান আলীর বাড়িতে পাওনা ৩০ হাজার টাকা চাইতে গিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। তখন বাড়ির বাইরে কয়েক যুবক তাকে আটক করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ওই এলাকার মো. আবু বাক্কারের (৩২) নেতৃত্বে যুবকেরা কিলঘুষি ও লোহার রড দিয়ে তাকে পেটান।

এরপর বিবস্ত্র করে রাস্তা দিয়ে প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে নিয়ে যান এবং তার কাছে থাকা সাড়ে ১৪ হাজার টাকা ও একটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। তাকে বটতলাহাট এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পর ওই ব্যবসায়ীর স্বজনেরা এগিয়ে এলে আসামিরা পালিয়ে যান। রাস্তায় হাঁটানোর সময় তাঁরা ভিডিও ধারণ করেন এবং ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় আসামিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেন।

ওসি আলমগীর জাহান আরও বলেন, লোকলজ্জা ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে ওই ব্যবসায়ী তাৎক্ষণিকভাবে থানায় অভিযোগ করেননি। ভিডিও ফুটেজটি হাতে পাওয়ার পর পুলিশ গতকাল রাতে তার বাড়িতে গিয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে আজ তিনি মামলা করেন।

বটতলাহাট এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলার ১ নম্বর আসামি আবু বাক্কারের চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসুর রহমানের চাচাতো ভাই। তার নেতৃত্বে ওই এলাকায় একটি সন্ত্রাসী চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলার সাহস পান না। তার ওপর মেয়রের ছায়া আছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন।

শেয়ার করুন