অর্থনৈতিকভাবে টালমাটাল আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে আকাশচুম্বী। বেড়েছে দেশটির সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। কিন্তু এই কষ্ট ছাপিয়ে আর্জেন্টিনার মানুষ কাতার বিশ্বকাপে মহাকাব্যিক জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতেছেন।
দেশটির চারদিকে ফাটছে আতশবাজি, বাজছে গাড়ির হর্ন, চলছে নাচ-গান। উড়ানো হচ্ছে জাতীয় পতাকা।
ফাইনালের নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ গোলে ম্যাচ শেষ হয়। এরপর পেনাল্টিতে গোল রক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের দুর্দান্ত প্রতিরোধে জয় পায় মেসির আর্জেন্টিনা।
৩১ বছর বয়সী জোয়েল সিয়ারালো নামের একজন আর্জেন্টাইন বারবার বলতে থাকেন, এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
সেন্ট্রাল বুয়েনস আয়ার্সের একটি ক্যাফে থেকে তিনি বলেন, এই সংগ্রাম তাদের ভাগ্যে ছিল। এটি আর্জেন্টাইন হওয়ার শর্ত।
আর্জেন্টিার রাজধানীতে বড় পর্দায় খেলা দেখা একজন বলেন, এটা কাব্য, এটা মহাকাব্য। এ রকম সংগ্রামই আর্জেন্টাইনদের ইতিহাস।
গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবা ছিল তাদের জন্য দুঃসহ। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে অসহনীয়।
টেম্পারলির ২৫ বছর বয়সী একজন নির্মাণ শ্রমিক ফাইনাল ম্যাচ দেখতে বুয়েনস আয়ার্সে এসে বলেন, আর্জেন্টিনা বর্তমানে এমন একটি দেশ যেটি চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানোই জটিল হয়ে পড়েছে।
তবে যাই হচ্ছে না কেন এই জয়টি আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান ও প্রাপ্য বলেও জানান তিনি।
জয়ের জন্য জাতীয় দলের কোচ লিওনেল স্কালোনিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন লকস্মিথ গ্যাব্রিয়েল এসকালান্তে।
সেনেটেনারিও পার্ক থেকে এসকালান্তে বলেন, সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তারা চাপে ছিল। কোচ অসাধারণভাবে তার কাজ সম্পন্ন করেছেন।
৩২ বছর বয়সী সার্জিও লরেটো নামের একজন বলেন, তারা এই জয়ের যোগ্য।
ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই দেশটির সেন্ট্রাল বুয়েনস আয়ার্সের আইকনিক ওবেলিস্কের চারপাশের চত্বরটি লোকজন আসতে শুরু করে। খেলাধুলায় বিজয় উদযাপনের জন্য এটি আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী স্থান।
আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত হওয়ার পরে হাজার হাজার মানুষ শহরের কেন্দ্রস্থলে নেমে আসে। যেখানে চোখ যায়, শুধু মানুষ। একই সঙ্গে আসতে থাকে সুমধুর ধ্বনি। কারণ ৩৬ বছর পর স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছে তারা।
সোলেদাদ প্যালাসিওস নামের একজন বলেন, আমার বয়স ৩৫ বছর। আর এই মুহূর্তের জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে সেই থেকে। এই জয় আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
২১ বছর বয়সী নাহুয়েল ক্যান্টেরো বলেন, এই জাতীয় দলটি সবাইকে একত্রিত করেছে। সব দ্বন্দ্ব ভুলে সবাই একই কাতারে এসছে। এটাই সুন্দর দৃশ্য।
২৩ বছর বয়সী মার্টিন রেইনা বলেন, এই দলটি সবকিছুরই যোগ্য। বিশেষ করে মেসির জন্য এটি অসাধারণ অর্জন। কারণ তিনি কখনই ক্লান্ত বা আশা ছাড়েননি। সব কিছু ছাপিয়ে জয় উদযাপনে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন আর্জেন্টাইনবাসী।
সূত্র: বুয়েনস আয়ার্স টাইমস