গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। ‘থাকব ভালো, রাখব ভালো দেশ; বৈধপথে প্রবাসী আয়-গড়ব বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৮ ডিসেম্বর এথেন্সস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে উদযাপন করা হয় দিবসটিকে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২২ উপলক্ষে আগামী ১৮-২৩ ডিসেম্বর ‘অভিবাসী সপ্তাহ ২০২২’ ঘোষণা করে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে দূতাবাস। এ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়েছে।
এছাড়া, দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের প্রচারাভিযান ও সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পবিত্র কোরআন থেকে তেলোওয়াত ও পবিত্র গীতা পাঠের মাধ্যমে দিবসটির আলোচনা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ।
এ সময় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রদত্ত বাণী পড়ে শোনানো হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বৈধপথে বাংলাদেশে নিয়মিত রেমিট্যান্স প্রেরণ ও রেমিট্যান্স প্রেরণে সহায়তা করার স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পুরস্কার ২০২২ হিসেবে প্রবাসীদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও সম্মাননা পত্র তুলে দেন রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ।
অনাড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিত কুমার পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের মিনিস্টার মো. খালেদ ও দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
আলোচনার শুরুতে দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিত কুমার পাল দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের জন্য গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। তিনি প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের কার্যক্রম ও প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের সদস্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উপকারিতা ও এর ভবিষ্যত গুরুত্বের ওপর বিশেষভাবে বক্তব্য দেন।
আলোচনায় অংশ নেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, নারী নেতারা এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের নেতাসহ বিভিন্ন শহর এবং দ্বীপাঞ্চলে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
প্রবাসী বক্তারা আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ও চেতনাকে সামনে নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আলোচনায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি অভিবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক এর তাৎপর্য তুলে ধরা হয় এবং গ্রিসে বসবাসরত সকল আনডকুমেন্টেড প্রবাসী বাংলাদেশিদের লিগালাইজেশন প্রক্রিয়ার ওপর বাংলাদেশ সরকার ও গ্রিক সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন, সেই সঙ্গে গ্রিসের শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রতি বছর বৈধপথে ৪০০০ শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে আসার সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি তুলে ধরেন।
আগামী ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে লিগালাইজেশনের প্রক্রিয়া শুরু হবে মর্মে গ্রিক সরকারের পক্ষ থেকে জানা গেছে মর্মে জানানো হয়। এক্ষেত্রে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অতি উৎসাহী হয়ে, কোনোভাবে কোনো দালাল বা প্রতারক দ্বারা প্রতারিত না হোন এবং বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও প্রতারক চক্রের প্ররোচনার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ করা হয় ও দূতাবাস থেকে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হবে মর্মে জানানো হয়।
উপস্থিত বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি হাজী আব্দুল কুদ্দুস প্রবাসীদের সন্তানদের বাংলাদেশ সরকারের কোটা সুবিধার আওতায় এনে চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে দাবি উপস্থাপন করেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে সরকারের নানামুখী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান।
রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদৃঢ় নেতৃত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে তিনি বলেন বাংলাদেশ সরকার অবৈধ অভিবাসন কখনো চায় না, দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে গ্রিস কোনো বাংলাদেশি প্রবেশ করুক তা বাংলাদেশ সরকার চায় না।
তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে দূতাবাসের গৃহীত সকল কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার জন্য প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানান।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনন্য অবদান এবং বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বিদেশের মাটিতে তুলে ধরার জন্য তাদের প্রশংসা করেন এবং তাদের উত্তরোত্তর সাফল্য, সমৃদ্ধি ও সুস্ব্যাস্থ কামনা করেন।
গ্রিস থেকে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণে বর্তমানে ১৯তম অবস্থানে রয়েছে, প্রতি বছর গ্রিস থেকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে যায়, যার পরিমাণ সমগ্র ইউরোপের মধ্যে চতুর্থ।
এ কারণে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২২ উপলক্ষে দূতাবাস বৈধপথে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ৩ টি পর্যায়ে (২টি প্রতিষ্ঠান, ৪ জন পুরুষ ও ১ জন নারী) মোট ৭টি আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পুরস্কার ২০২২-এ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স দেওয়া ও রেমিট্যান্স প্রেরণে সহায়তাকারী বিবেচনায় সম্মাননার জন্য মনোনীত করা হয় এবং তাদের আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২২-এর অনুষ্ঠানে দূতাবাস কর্তৃক সম্মাননা স্মারক ও সম্মাননা দেওয়া হয়।
সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে: এন, বি, এল মানি ট্রান্সফার এজেন্সি ও ইসলাম মফিদুল এজেন্সি। ব্যক্তি পর্যায়ে (নারী): মানসুরা আক্তার এবং ব্যক্তি পর্যায়ে (পুরুষ): মো. সাইদুর রহমান, মোশাররফ হোসেন লিয়াকত, মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মো. আলামিন মিয়া। সম্মাননা স্মারক ও সম্মাননা পত্র প্রাপ্তরা দূতাবাসকে তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।