২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর দেশি-বিদেশি সমালোচনার মুখে ব্যবসা টেকাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে মনোযোগী হন তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। কেউ কেউ পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে সেই আগ্রহ অন্য অনেক উদ্যোক্তার মধ্যে ছড়িয়ে যায়। ফলে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশবান্ধব কারখানার মুকুট এখন বাংলাদেশে।
চলতি ডিসেম্বর মাসে নতুন করে দুটি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেয়েছে। তাতে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার সংখ্যা বেড়ে ১৮০-তে দাঁড়াল। আর মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠান সনদ পেলে পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে ডাবল সেঞ্চুরি বা দ্বিশত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেটি হতে হয়তো খুব বেশি সময় লাগবে না। কারণ, পাইপলাইনে পাঁচ শতাধিক পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
চলতি বছর তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের মোট ২৭টি প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেয়েছে। তার মধ্যে চলতি মাসে নতুন যে দুটি কারখানা পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ঢাকার ভিক্টোরিয়া ইনটিমেটস ও ময়মনসিংহের ড্রেসডেন টেক্সটাইল। দুটি প্রতিষ্ঠানই লিড গোল্ড সনদ পেয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব পোশাক ও বস্ত্রকল রয়েছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাশাপাশি শিপইয়ার্ড, জুতা ও ইলেকট্রনিক পণ্য খাতে আছে পরিবেশবান্ধব কারখানা। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, তবে সংখ্যায় কম।
বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। এ জন্য নতুন ভবন নির্মাণ কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করে আবেদন করা যায়।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে লিড সনদ পাওয়া ১৮০ পোশাক ও বস্ত্র কারখানার মধ্যে ৫৮টি লিড প্লাটিনাম, ১০৮ গোল্ড, ১০ সিলভার ও ৪টি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে।