মায়ের ভাষা, স্বাধীনতা, মুক্তি আর প্রগতির সঙ্গে অনবদ্য সম্পর্কের ইতিহাসের নজির পৃথিবীতে খুব কম। সেই অনবদ্য ইতিহাসটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। ক্ষমতাসীন এই দলটির হাতে ধরেই বাংলাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা ও নেতৃত্ব। ভাষা আন্দোলনের পর স্বশাসনের যে চেতনাবোধ পূর্ব পাকিস্তানে সক্রিয় ছিল, সেই আন্দোলন সবশেষে রূপান্তর হয় মুক্তির আন্দোলনে। নায়ক হয়ে ওঠেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির জীবনের এই মুক্তি আর বোধের সম্মিলন হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো এই মুক্তিবোধ আর প্রগতিবাদী রাজনীতির মূলস্বরকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে ‘থিম সং’।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠেয় ২২তম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর বিভাগের উদ্যোগে নবনির্মিত ‘থিম সং’ যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত গীতিকবি জুলফিকার রাসেলের গীতিকাব্যে দলের ৭৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সৃষ্ট দলের থিম সংয়ে সুর তুলেছেন দেশের খ্যাতনামা কয়েকজন কণ্ঠশিল্পী। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পরিকল্পনায় গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন পাভেল আরিন। গানটিতে মোহনবীণা বাজিয়েছেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ভারতের কিংবদন্তী শাস্ত্রীয় সংগীতব্যক্তিত্ব পণ্ডিত বিশ্ব মোহন ভাট। কণ্ঠ দিয়েছেন পান্থ কানাই, চন্দনা মজুমদার, দিলশাদ নাহার কণা ও মাশা ইসলাম। ইয়াসির মাহমুদ খানের সমন্বয়ে চিত্র পরিচালনা করেছেন ইশতিয়াক মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে থিম সংটি আপলোড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, থিম সংটি আগেই অনুমোদন করেছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ (বৃহস্পতিবার) গণভবনে দলটির কার্যনির্বাহী কমিটির সভার আগে গানটি বাজিয়ে শোনানো হয়।
একটি রাজনৈতিক দলের ৭৩ বছরে এসে প্রথমবারের মতো থিম সং, কীভাবে এই পরিকল্পনা– এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল, যার নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। দলের দীর্ঘ ৭৩ বছরের ইতিহাসে অসংখ্য জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুঁজলে এক-একটি সম্মেলনে একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন যে কারও চোখে পড়বে। তবে এবারই প্রথম দলের দফতর বিভাগ থেকে একটি থিম সং করা হয়েছে।’
‘অসাধারণ কিছু করার চিন্তা থেকে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন’-এই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অতীতের বিভিন্ন সম্মেলনে সংস্কৃতি বিভাগ থেকে নানা আয়োজন করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের সম্মেলনেও অনেক আয়োজন থাকবে।’
পরিকল্পনার সূত্রপাত নিয়ে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উল্লেখ করেন, ‘দফতর বিভাগ থেকে আমাদের মাথায় একটি থিম সং করার চিন্তা আসে। এটি আমরা মানসম্পন্নভাবেই করার চেষ্টা করেছি। গানটির কথা যেমন সুন্দর হয়েছে, তেমনই এর অডিও ও ভিডিও উপস্থাপনাও মনোমুদ্ধকর হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।’
কীভাবে যুক্ত হলেন একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগের সঙ্গে– জানালেন গীতিকবি জুলফিকার রাসেল। তার ভাষ্য, ‘আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের একটি থিম সং করার পরিকল্পনার কথা জানান। গানটিতে কী কী বিষয় থাকতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন। এটা নিয়ে তার মধ্যে যে প্রাণচঞ্চল্য দেখেছি তা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে। গানটি লেখার জন্য নিজ উদ্যোগে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র এবং বিভিন্ন ক্রোড়পত্র দিয়ে সহায়তা করেছেন। এটা নিয়ে আমার সঙ্গে এবং গানটি নির্মাণে জড়িত সবার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। আমি চেষ্টা করেছি দেশের সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় এই দলটিকে গানের কথায় যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে। সুরকার পাভেল আরিন সেই বাণীতে অসাধারণ সুর করেছেন। শিল্পীরাও চমৎকার গেয়েছেন। এরকম একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগে থাকতে পেরে আমি সত্যিই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।’
গানটির সুরকার ও সংগীত পরিচালক পাভেল আরিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের থিম সং! তাই বিষয়টি আমার কাছে বিরাট একটি চ্যালেঞ্জের মতো ছিল। সবাই গানটি শোনার পর থেকে প্রশংসা করছেন। মনে হচ্ছে আমি সফল।’
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, থিম সংয়ে শব্দচয়ন, ভাষার শৈল্পিক উপস্থাপনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রেক্ষিতের বর্ণনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। গানটিতে শব্দের গাঁথুনি যেমন অসাধারণ হয়েছে, তেমনই সুরের মুর্ছনায় বিগলিত হবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অন্যরাও। থিম সংয়ের ভিডিওচিত্র দেখেও ইতিবাচক মতামত জানান নেতারা।
২৪ ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হবে। এদিন বিকালে হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য – ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রত্যয়’।
প্রতিবার দুই দিনব্যাপী সম্মেলন হলেও এবার কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য একদিনে সম্পন্ন হবে। প্রথম অধিবেশনের পরে খাবার ও নামাজের বিরতি হবে। তারপরেই মূল অধিবেশন, কাউন্সিল অধিবেশন হবে। সম্মেলনের মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট, প্রস্থ ৪৪ ফুট। সম্মেলনে প্রবেশের জন্য পাঁচটি গেট থাকবে। এর মধ্যে একটি ভিআইপি গেট, বাকি চারটি কাউন্সিলরদের প্রবেশের জন্য। সকাল ৭টায় কাউন্সিলর-ডেলিগেটদের প্রবেশের গেট খুলে দেওয়া হবে।