কৃষক আফজাল হোসেন পুরো ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছেন। বন্ধকি দায়মুক্তি দলিল সম্পাদনও করে দিয়েছে ব্যাংক। কথা ছিল, সরাসরি ব্যাংকে টাকা শোধ করলে ব্যাংক মামলা প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু ব্যাংক তা করেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কৃষক আফজাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আফজাল হোসেনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বালুগ্রামে। তার নামে মামলা করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের রহনপুর শাখার পক্ষ থেকে। বিষয়টি জানার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিব খান মামলাটি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তা সফল হয়নি।
এ কৃষক গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনে আজ শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসক বলেন, এটা ব্যাংকের বেনিয়াসুলভ আচরণ। ওই কৃষক তার কাছে এসেছিলেন। তিনি ওই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন যে, তারা (ব্যাংক) টাকা পেয়েছে—এ মর্মে কাগজপত্র আদালতে সাবমিট (জমা) করুক। তারপর মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনিও আদালতকে অনুরোধ করবেন।
জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিব খান বলেন, যে কৃষক একবার টাকা শোধ করে দিয়েছেন, তিনি কেন শুধু মামলা নিষ্পত্তির জন্য আবার টাকা জমা দেবেন? আর এত টাকা ওই কৃষক পাবেন কোথায়? এ দায়িত্ব ব্যাংককেই নিতে হবে। তিনি আইনের ধারা ব্যাখ্যা করেও ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেছেন। কৃষককে একই ঋণের টাকা দ্বিতীয়বার জমা দিতে তারা বাধ্য করতে পারে না।
আজ সকালে কৃষক আফজাল হোসেনের মেয়ে আফিয়া জাহান বলেন, তার বাবাকে নাচোলের কৃষি খামার থেকে গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাতেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার বাবার কাছে শীতের কোনো পোশাকও ছিল না। পরনে যেই পোশাক ছিল, ওই পোশাকেই পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। সকালে তার মা জান্নাতুন নেসা কারগারে গিয়ে শীতের পোশাক দিয়ে এসেছেন।
আফজাল হোসেন ছয় মাস কারাগারে থাকার পর চারটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। একপর্যায়ে হয়রানি থেকে রেহাই চেয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন।
গত ৭ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে করা লিখিত আবেদনে আফজাল হোসেন উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি জমি বন্ধক রেখে ইসলামী ব্যাংকের রহনপুর শাখা থেকে তার ‘এবি কৃষি খামার’–এর ওপর ২০ লাখ টাকা ঋণ নেন। জমিতে আম, পেয়ারা ও পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঋণের কিস্তি সঠিকভাবে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানালেও তার নামে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারটি মামলা করা হয়। তখন তাদের মোট দাবি ছিল ২২ লাখ টাকা।