২৪ ঘণ্টায় তাইওয়ানের দিকে ৭১ যুদ্ধবিমান, ৭ জাহাজ পাঠাল চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

চীনের যুদ্ধবিমান। ছবি : ইন্টারনেট

তাইওয়ানের প্রতি নিজের সামরিক শক্তির সরাসরি জানান দিয়ে চলেছে চীন। গত ২৪ ঘণ্টায় এই দ্বীপ ভূখণ্ডটির দিকে ৭১টি যুদ্ধবিমান এবং সাতটি জাহাজ পাঠিয়েছে এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটি। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) এই তথ্য জানায়।

মূলত গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় সংক্রান্ত বিলে তাইওয়ান-সম্পর্কিত বিধানগুলো নিয়ে চীন ক্ষোভ প্রকাশ করার পরে বেইজিংয়ের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের এই ঘটনা ঘটল। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

তাইওয়ান ইস্যুতে বছরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বারবারই। পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপ ভূখণ্ডটিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় শীর্ষ ক্ষমতাধর রাজনীতিকের সফর এবং এর জেরে ভূখণ্ডটির চারপাশে চীনের জোরালো সামরিক মহড়ায় উত্তেজনার পারদ ছিল অনেক ওপরে।

আর এরই জেরে তাইওয়ানের আশপাশে প্রায়ই যুদ্ধবিমান ও জাহাজ পাঠিয়ে চলেছে চীন। অবশ্য চীনের হাতে স্ব-শাসিত তাইওয়ানের সামরিক হয়রানি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক বেড়েছে এবং কমিউনিস্ট পার্টির পিপলস লিবারেশন আর্মি প্রায় প্রতিদিনই দ্বীপটির দিকে বিমান বা জাহাজ পাঠাচ্ছে।

এপি বলছে, রোববার সকাল ৬ টা থেকে সোমবার সকাল ৬ টার মধ্যে চীনা যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে ৪৭টি বিমান তাইওয়ান প্রণালীর মাঝামাঝি অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছে তাইওয়ানের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। মূলত তাইওয়ান প্রণালীই চীন-তাইওয়ানের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক এবং উভয় পক্ষের স্বীকৃত সীমানা বলে পরিচিত।

বলা হচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তাইওয়ানের দিকে চীন যে বিমানগুলো পাঠিয়েছে তার মধ্যে ১৮টি জে-১৬ ফাইটার জেট, ১১টি জে-১ ফাইটার, ৬টি এসইউ-৩০ ফাইটার এবং অন্যান্য ড্রোন রয়েছে। তাইওয়ান বলেছে, তারা নিজেদের স্থল-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পাশাপাশি নিজস্ব নৌবাহিনীর জাহাজের মাধ্যমে চীনা কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

পিএলএর ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র শি ই রোববার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটি বর্তমান মার্কিন-তাইওয়ানের (সঙ্গে চীনের) উত্তেজনা এবং উস্কানির দৃঢ় প্রতিক্রিয়া।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পিএলএ তাইওয়ানের চারপাশে পানিতে যৌথ যুদ্ধ টহল এবং যৌথ হামলার অনুশীলন করছে।

শি তার বিবৃতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যয় বিলের কথাও উল্লেখ করেন, চীন এটিকে একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ বলে থাকে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে ওই আইনে তাইওয়ানের সাথে বর্ধিত নিরাপত্তা সহযোগিতার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং উদীয়মান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, প্রস্তুতি এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারতের সাথে বর্ধিত সহযোগিতার প্রয়োজনের কথাও উল্লেখ করেছে।

এপি বলছে, তাইওয়ানের পক্ষে মার্কিন সরকারের নানা পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় চীনের সামরিক বাহিনী প্রায়শই শক্তি প্রদর্শন হিসাবে বড় সামরিক মহড়া ব্যবহার করে আসছে। এর আগে গত আগস্টে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক সামরিক মহড়া পরিচালনা করে চীন।

মূলত তাইওয়ানে বিদেশি সরকারি কর্মকর্তাদের সফরকে দ্বীপটিকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি এবং চীনের সার্বভৌমত্বের দাবির প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে থাকে বেইজিং।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।

অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।

তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

শেয়ার করুন