দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার প্রসার ঘটলেও এর ব্যবহার এখনো অনেক কম। বর্তমানে দেশে ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আর ৬৩ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করেন ইন্টারনেটের কোনো প্রয়োজনই নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহার জরিপ ২০২২’–এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সরকারি এই সংস্থাটি ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এ বছরের ২৯ মে থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী যে কয়জন ব্যক্তি একই রান্নায় খাওয়াদাওয়া এবং একসঙ্গে বসবাস করে, তাদের একত্রে একটি খানা বা হাউসহোল্ড বলা হয়।
বিবিএস জরিপে দেখা গেছে, ইন্টারনেট না ব্যবহার করা মানুষের মধ্যে গ্রামের ৬৪ শতাংশের বেশি এবং শহরের ৫৮ শতাংশ মানুষ রয়েছে। ইন্টারনেট সেবাকে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ব্যয়বহুল ও প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছে ইন্টারনেটের ব্যবহারের জন্য যেসব উপকরণ দরকার, সেটাও ব্যয়বহুল।
দেশে আইসিটি ব্যবহারে পিছিয়ে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। রাজশাহী বিভাগে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারে ইন্টারনেট এবং ৩২ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয়। রংপুরে ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করে। তবে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মুঠোফোন ও স্মার্টফোনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগ পিছিয়ে কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে, মাত্র ৪ শতাংশ।
বিবিএসের ব্যক্তিপর্যায়ে আইসিটির ব্যবহারে বলা হয়েছে, দেশের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষের নিজস্ব মুঠোফোন আছে। এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ ও ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ নারী। ব্যক্তিপর্যায়ে স্মার্টফোন ব্যবহার প্রায় ৩১ শতাংশ, দিনে অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া দিনে অন্তত একবার মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে। এ ছাড়া শহরের মানুষ মুঠোফোন, ইন্টারনেট ব্যবহারে এগিয়ে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের প্রায় ৪১ শতাংশ ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী। মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, দেশের মানুষের আইসিটি দক্ষতায় বলা হয়েছে, ৮৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ তথ্য এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় সরানোর জন্য কপি পেস্ট করতে পারে এবং ডিজিটাল দুনিয়ায় কনটেন্ট ও তথ্য ব্যবহার করতে পারে। ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বার্তা পাঠাতে পারে। এ ছাড়া দক্ষতায় সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে প্রোগ্রামিং বা কোডিংয়ে, মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
পরিবারভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী বিবিএস জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে মুঠোফোন ব্যবহার হয়। এ ছাড়া পরিবারে স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিমাণ ৫২ দশমিক ২ শতাংশ। ল্যান্ডফোন ব্যবহার অনেক কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশের মানুষ। পরিবারে কম্পিউটার ব্যবহারের পরিমাণ ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহার হয় ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ পরিবারে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের বাধা হিসেবে যে তথ্য দিয়েছে বিবিএস তাতে দেখা যায়, দেশের ৬৩ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করে ইন্টারনেটের কোনো প্রয়োজন নেই। যার মধ্যে গ্রামের ৬৪ শতাংশের বেশি এবং শহরের ৫৮ শতাংশ মানুষ রয়েছে। ইন্টারনেট সেবাকে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ব্যয়বহুল মনে করে। এ ছাড়া প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছে ইন্টারনেটের ব্যবহারের জন্য যেসব উপকরণ দরকার, সেটাও ব্যয়বহুল।
দেশের উত্তরাঞ্চলে ইন্টারনেট, মুঠোফোন ও স্মার্টফোন ব্যবহার কম। আইসিটির ব্যবহারে বিবিএস ২০১৩ ও ২০২২ সালের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছে। তাতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে পরিবারপর্যায়ে মুঠোফোন ব্যবহার বেড়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সময়ে তাদের ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে এই ১০ বছরে কম্পিউটার ব্যবহার বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ।