অপেক্ষার পালা শেষ। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান এক বাস্তবতা। গতকাল বুধবার থেকে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে দেশ। খুলেছে গণপরিবহনে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ পতাকা ওড়ানোর মধ্য দিয়ে ঘুরলো ও যানজটের নগরী ঢাকার বুকে গড়াল মেট্রোরেলের চাকা। যাত্রা হলো স্বপ্নবাহনের চলার। এ শুভক্ষণের অপেক্ষায় ছিল পুরো জাতি। অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর মেট্রোরেল বিস্ময় জাগানো আমাদের আরেকটি মাইলফলক অর্জন।
মেট্টোরেল উদ্ভোধনের মধ্য দিয়ে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নি:সন্দেহে নতুন একটি যুগ শুরু হলো বুধবার। কারণ, আধুনিক নগরজীবনে মেট্রোরেল সৃষ্টি করেছে গতির নতুন যুগ। কমিয়েছে যানজটের দুর্ভোগ। এ পরিবহন দ্রুতগামী, তাই সময় সাশ্রয়ী। পরিবেশকেও রাখে দূষণমুক্ত। যানজটে অতিষ্ঠ ঢাকার বাসিন্দারা গতকাল দেখেছেন ব্যস্ত সড়কের মধ্যে পিলার বসিয়ে তৈরি উড়ালপথে ছুটে চলে ট্রেন। মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও চলে আসছেন মানুষ। মেট্টোরেল আমাদের জন্য গৌরব, আনন্দ ও অহংকারের। সাধারণ যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে।
কোনো সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের চিন্তা দেশ, মানুষের কল্যাণ ঘিরে হলে সেগুলোর প্রতিফলন দেখা যায় সেই সরকারের নীতি ও পরিকল্পনায়। সেই রাষ্ট্রে কখনো কখনো অসম সাহসের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় সরকারের নীতি ও পরিকল্পনার আলোকে। জনগণের কল্যাণে গৌরবজনক পদ্মা সেতুর পর মেট্টোরেল শেখ হাসিনার সরকারের তেমন নীতি ও পরিকল্পনারই বাস্তবায়ন। মেট্রোরেলকে দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রার আরেকটি পালক হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অহংকারের আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম।’
দেশে সম্পূর্ণ নতুন সংযোজিত গণপরিবহন মেট্রোরেল ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষকে শুরু থেকেই যথাযথ সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকের আগে কখনো মেট্রোরেলে চড়া হয়নি। সব যাত্রীকে নিয়মনীতি মেনে মেট্টোরেলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাও বলেছেন, ‘অনেক টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করা হয়েছে। মেট্টোরেল সংরক্ষণ করা সবার দায়িত্ব। যেন মেট্রোরেলের কোনো কিছু নষ্ট না হয়, সে জন্য সবাইকে তা ব্যবহারে যত্নশীল হতে হবে।’ আমাদের বিশ্বাস, সবাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে মেট্রোরেল ব্যবহার করবেন।
মেট্রোরেল পরিচালনা হবে ২০১৫ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া মেট্রোরেল আইনে। বিনা টিকেটে ভ্রমণসহ কোন অপরাধে কী শাস্তি, ভাড়া এড়ানোর জন্য অন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে কতো টাকা জরিমানা ও কতো মাসের কারাদণ্ড, কেউ অননুমোদিতভাবে মেট্রোরেলের টিকেট বা পাস বিক্রি বা জাল করলে কতোদিনের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের পরিমাণ কতো, রেল পরিদর্শককে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে কী শাস্তি, ট্রেন বা স্টেশনের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকলে শাস্তি কী- ইত্যাদির বিবরণ আইনে আছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি এসব বিষয়ে যাত্রীদের সচেতনতা বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, মেট্রোরেল নগরবাসীর জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতি আনবে।