যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রে’ পরিণত হতে পারে রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, যুদ্ধের শুরু থেকেই তিনি ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিজের দখলে নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি ইউক্রেনের অবশিষ্টাংশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।

যুদ্ধের দশ মাস কেটে গেছে। এরমধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, খেরসন, লুহানস্ক ও জাপোরিঝঝিয়া, এ চার অঞ্চলকে রাশিয়ার নিজস্ব ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেন। তবে এসব অঞ্চলে এখনও অস্থিরতা চলছে। নভেম্বরের প্রথম দিকে ইউক্রেন ও তার মিত্রদের পাল্টা আক্রমণে খেরসন ছাড়তে বাধ্য হন রুশ সেনারা।

universel cardiac hospital

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, পুতিন নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধকে যেভাবে দীর্ঘস্থায়ী করছেন, তাতে তার নিজ দেশের সাধারণ নাগরিকরাই ভোগান্তিতে পড়েছেন। পরিস্থিতি এখন এমন যে, এ যুদ্ধ রাশিয়াকেই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে রূপ দিতে চলেছে।

সংবাদমাধ্যমটির দাবি, যুদ্ধ আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে রাশিয়ায় ব্যাপক নৈতিক অবক্ষয় ও গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রুশ নাগরিক।

এদিকে, পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে জেলেনস্কিকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষণ করে যাচ্ছে তাতে, রাশিয়ার যুদ্ধে টিকে থাকার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। এমন অবস্থায় দেশটি অশাসনযোগ্য ও বিশৃঙ্খল হয়ে উঠতে পারে।

একাতেরিনা শুলম্যান নামের এক রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলছেন, ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল দখলের মাধ্যমে পুতিন নতুন রুশ ফেডারেশন গঠন করেছেন, তা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ফেডারেশনটি নিজের মৌলিক কাজগুলো সম্পাদন করার মতো সক্ষমতা এখনো অর্জন করেনি।

তিনি আরও বলেন, সংযুক্তিকরণ ইউক্রেনীয় বাহিনীকে থামাতে পারবে না। বরং এটি উত্তর ককেশাস প্রজাতন্ত্রসহ রাশিয়ার নিজস্ব অঞ্চলগুলোকে অস্থির করে তুলবে ও কেন্দ্রীয় সরকার যদি নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে, তাহলে খুব সহজেই এ অঞ্চলগুলো রাশিয়ার হাতছাড়া হয়ে যাবে।

একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, সামরিক শক্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। যদিও রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার বর্তমানে পুতিনের শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে কাজ করছে।

এমনকি, ওয়াগনার প্রকাশ্যে রুশ কারাবন্দীদের তাদের দলে যুক্ত করছেন। বাহিনীতে যোগ দেওয়ার বিনিময়ে তাদের সাজা মওকূফ করে দেওয়া হচ্ছে। একই কথা বলা যেতে পারে, চেচেন প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর ক্ষেত্রেও।

এসবের পরও রাশিয়া তার মৌলিক কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারছে না। সামরিক বাহিনীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় পুতিন প্রশাসন তিন লাখ সাধারণ রুশ নাগরিককে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করেছেন।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব নতুন সেনার একমাত্র কাজ হলো, ইউক্রেনীয় বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। তাদের মধ্যে অনেকেই ২০২৩ সালে বেঁচে থাকবেন কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

সেনাবাহিনীতে এমন জোরপূর্বক নিয়োগের ঘোষণা রাশিয়াকে অভ্যন্তরীণভাবে অস্থির করে তোলে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষিপ্ত তরুণরা নিয়োগকেন্দ্রে আগুন লাগিয়ে দেন। তাছাড়া, কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

শুধু যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহেই তিন লাখের বেশি রুশ নাগরিক দেশ ছাড়েন, যাদের বেশিরভাগই তরুণ, শিক্ষিত ও সম্পদশালী। অনেকে বলছেন, রাশিয়ার অর্থনীতি ও জনসংখ্যার ওপর তাদের প্রস্থানের সম্পূর্ণ প্রভাব এখনও পড়েনি, তবে সামাজিক উত্তেজনা বাড়ছে।

রাশিয়ার কারাগারে বন্দী বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি আদালতের এক শুনানিতে বলেছিলেন, আমরা আমাদের বিপর্যয় রোধ করতে পারিনি, বরং আমরা সেদিকে দ্বিগুন গতিতে আছড়ে পড়তে চলেছি। এখন একমাত্র প্রশ্ন হলো, রাশিয়া কতটা ভয়াবহভাবে বিপর্যয়ের তলদেশে আঘাত করবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর এ প্রশ্নের উত্তর কিছুটা হলেও পাওয়া যাবে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

শেয়ার করুন