ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনে ওড়ানো অনেক ফানুস মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারের ওপর পড়েছে। দুর্ঘটনা রোধে রোববার (১ জানুয়ারি) মেট্রোরেল চলাচল দুই ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। ফলে অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসে ফিরে গেছেন। কেউ কেউ মনে করছেন- মেট্রোরেল হয়তো কোনো কারণে বন্ধ। এমনকি সকাল ১০ থেকে মেট্রোরেল চালু করার পরও পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যায়নি। এতে এক ধরনের ফাঁকা অবস্থায় চলাচল করেছে মেট্রোরেল কোচগুলো। ফলে তৃতীয় দিনের থেকে চতুর্থ দিনে মেট্রোরেলে রাজস্ব কমেছে তিন লাখ ১৫ হাজার ৩৭০ টাকা।
আজ সোমবার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) থেকে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোববার মেট্রোরেল আগারগাঁও স্টেশনে দেখা যায় যাত্রীশূন্য। মূলত দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়। এমনকি টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের সামনেও যাত্রী তেমন চোখে পড়েনি। অথচ অন্যান্য দিন স্টেশন গেটে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন।
চতুর্থ দিনে ৯ লাখ ১৬ হাজার ৩৪০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে মেট্রোরেলে। রোববার সিঙ্গেল জার্নি টিকিট (এসজেটি) বিক্রি হয়েছে তিন লাখ ৯৩ হাজার ৬৪০ টাকার, অথচ এদিন আগে শনিবার পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৭১০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। রোববার ছয় হাজার ৫২৮টি সিঙ্গেল টিকিট বিক্রি হয়েছে, শনিবার বিক্রি হয়েছিল নয় হাজার ২৮৯টি টিকিট।
চতুর্থ দিনে এমআরটি পাস টিকিট বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩৮টি। প্রতি টিকিটের দাম ৬০টাকা ধরে আয় হয়েছে পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭০০ টাকা, এর আগের দিন পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৭১০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছিল।
সব মিলিয়ে শনিবার ১২ লাখ ৩১ হাজার ৭১০ টাকার টিকেট বিক্রি হলেও ফানুস ওড়ানোর জেরে রোববার মাত্র নয় লাখ ১৬ হাজার ৩৪০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়।
মেট্রোরেল ঢাকার গণপরিবহন–ব্যবস্থায় নতুন একটি যুগ। রাজধানীতে প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করেছে। যানজটে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী দেখবে ব্যস্ত সড়কের মধ্যে পিলার বসিয়ে তৈরি উড়ালপথে ছুটে চলছে ট্রেন। মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে উত্তরা থেকে আগারগাঁও চলে আসছে মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ ডিসেম্বর (বুধবার) মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। এরপরে ২৯ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত হয় মেট্রোরেল।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়, প্রথম দিন সিঙ্গেল টিকিট বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ৯৯৬টি। প্রতিটি টিকিটের দাম ৬০ টাকা। মেট্রোরেলে যাতায়াতের জন্য ৩০৪টি এমআরটি পাস বিক্রি হয়। প্রতিটি এমআরটি পাসের দাম সর্বমোট ৫০০ টাকা। এর মধ্যে কার্ডের জামানত ২০০ টাকা। বাকি ৩০০ টাকা ব্যালেন্স, যা দিয়ে ভ্রমণ করা যাবে। আর কার্ড জমা দিলে জামানতের টাকা ফেরত দেবে সরকার। সব মিলিয়ে প্রথম দিনে মোট তিন লাখ ৯৩ হাজার ৫২০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়।
তবে দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ শুক্রবারে (৩০ ডিসেম্বর) মাত্র ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। অথচ প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন ট্রিপ সংখ্যা ছিল ৫০টা। অর্থাৎ আগারগাঁও থেকে উত্তরা উত্তরা স্টেশনে ২৫বার করে মেট্রোরেল যাতায়াত করেছে অর্থাৎ ট্রিপ সংখ্যা ৫০টি। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে ট্রিপ সংখ্যা একই হলেও ভাড়া কমেছে অনেক। অথচ মেট্রোরেলে চড়তে না পেরে হাজারো মানুষ বাড়ি ফিরে গেছেন।
এদিকে, প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে তৃতীয় দিনে। কিন্তু চতুর্থ দিনে আবারও কমলো টিকিট বিক্রি।
ডিএমটিসিএলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তৃতীয় দিনে ১২ লাখ ৩১ হাজার ৭১০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। অথচ চতুর্থ দিনে কমে নয় লাখ টাকা হয়েছে। মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে ফানুস পড়েছিল। এগুলো অপসারণ করার জন্য মেট্রোরেলে দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এর প্রভাবেই মূলত চতুর্থ দিনে মেট্রোরেলের টিকিট বেচাকেনা কম হয়েছে।