আওয়ামী লীগে এক দশকে নারী নেতৃত্ব বেড়েছে দ্বিগুণ

মত ও পথ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম হলেও আওয়ামী লীগ এদিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণের ক্ষেত্রে যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা পূরণে তুলনামূলক শীর্ষে রয়েছে দলটি। গত এক দশকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্ব বেড়েছে দ্বিগুণ।

২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ১৯তম সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগের কমিটিতে ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ ১০ জন নারী ছিলেন। ১০ বছর পর গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের পর নবগঠিত কমিটিতে নারী সদস্যের সংখ্যা ২০ জন। ফলে নারী নেতৃত্বের হার হয়েছে ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ আশা জাগানিয়া হলেও তৃণমূল পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বেশ হতাশাজনক। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অধিকাংশ কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ ১০ শতাংশের ওপরে নয়।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সমাজের যে কোনো পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন, অধিকার বেড়েছে অনেক। তেমনি রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়ুক তা চায় দলটি। তৃণমূল পর্যায়েও যাতে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়, সেই অনুযায়ী কাজ চলছে। তৃণমূলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে দুটি সংগঠন আছে যেখানে শতভাগ নারী নেতৃত্ব। মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগ—এই দুটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত শতভাগ নারী নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দলের চরম দুর্দিনে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে সভাপতি হওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে একটি খণ্ড-বিখণ্ড রাজনৈতিক দলে পরিণত করে তৎকালীন সামরিক শাসকরা। সেই সংকটময় সময়ে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন এবং সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালেও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (প্রয়াত), বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডা. দীপু মনি, সাহারা খাতুন (প্রয়াত) ও শেখ ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির (প্রয়াত) মতো অসংখ্য নারী নেতাকর্মী দলের জন্য বিশাল ভূমিকা রাখেন। ২০০৮ সালে হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বাধ্যবাধতা ছিল। তবে ঐ সময়ের মধ্যে প্রায় কোনো দলই ইসির এ শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

২০১৯ সালের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিতের প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয় এবং পরে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রেও যুক্ত করা হয়। তবে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত দলটির সম্মেলনে গঠনতন্ত্র ফের সংশোধন করে নারী নেতৃত্বের শর্ত পূরণের সময় বাড়ানো হয়। এছাড়া দলটি ইসির কাছে চিঠি দিয়েও শর্ত পূরণের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনও এই শর্ত পূরণের সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। তবে আরপিও এখনো সংশোধন হয়নি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এবার নারী সদস্য সংখ্যা একজন বেড়েছে। বিগত কমিটির বিভিন্ন পদে নারী সদস্য ১৯ জন ছিল, সেখান থেকে বেড়ে এখন ২০ জন হয়েছে। আগের কমিটিতে এই হার ছিল ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বর্তমানে পদ শূন্য থাকা তিনটি পদে কোনো নারী সদস্য যুক্ত হলে এই হার আরো বাড়বে। অন্যদিকে পুরুষদের দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করা হলে নারী নেতৃত্বের হার কিছুটা কমে যাবে।

রোববার আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ৭৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রেসিডিয়াম, সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় সদস্যের একটি করে পদ এখনো শূন্য রয়েছে। আওয়ামী লীগের ৭৮ সদস্যবিশিষ্ট নবনির্বাচিত কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৬ প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে তিন জন নারী ও ১৩ জন পুরুষ। বিদায়ী কমিটিতেও ১৭ সদস্যের মধ্যে তিন জন নারী ছিলেন। তাদের মধ্যে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন মারা গেলে পুরুষ সদস্য নির্বাচন করে সেই পদ পূরণ করা হয়েছিল। পরে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মারা গেলে সিমিন হোসেন রিমিকে নির্বাচন করা হয়।

নতুন কমিটিতে সিমিন হোসেন রিমি ছাড়া বাকি দুই নারী হচ্ছেন আগের কমিটির বেগম মতিয়া চৌধুরী ও নতুন করে নির্বাচিত হওয়া সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। সৈয়দা জেবুন্নেছা ২০১২ সালের কমিটিতে কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, অর্থ ও পরিকল্পনা বিয়ষক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুর নাহার এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা একইপদে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। অবশ্য আগের সম্মেলনে মেহের আফরোজ চুমকি মহিলাবিষয়ক সম্পদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এবারের সম্মেলনের কয়েক দিন আগে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তার শূন্য পদে জাহানারা বেগমকে নির্বাচিত করা হয়। নতুন সম্মেলনে তিনি এ পদটি আবারও পেয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যের ২৮টি পদের মধ্যে ২৭ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিতে আগের কমিটির নারী সদস্য বেগম আখতার জাহান, মেরিনা জাহান, পারভীন জামান কল্পনা, সফুরা বেগম রুমি, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, হোসনে আরা লুত্ফা ডালিয়া, মারুফা আক্তার পপি ও গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা সবাই নতুন কমিটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন। এর বাইরে বিশিষ্ট নাট্যাভিনেত্রী তারানা হালিম নতুন করে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনয়ন পেয়েছেন।

এ বিষয়ে দলটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সমাজের সর্বক্ষেত্রে কিন্তু নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। আওয়ামী লীগের নারীর অংশগ্রহণ কিন্তু অন্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে বেশি। তবে আমরা চাই, শুধু কোটা অনুযায়ী নয়, তার চেয়ে বেশি হারে নারীর অংশগ্রহণ হোক রাজনীতিতে। এটা যাতে তৃণমূল পর্যায়েও বিস্তৃত হয় সেজন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

শেয়ার করুন