টানা দুদিন মুখ লুকিয়ে থাকা সূর্যের দেখা মিললেও শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে যশোরে । উত্তরে হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতে কাঁপছে। ৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল যশোরে। হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার যশোরে সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিন যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে বুধবার যশোর জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এদিন জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই কুয়াশা ও মেঘের কারণে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি; অন্যদিকে বাতাস। তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছিল নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। দুদিন পর বৃহস্পতিবার সূর্যের দেখা মিললেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে ৯ ডিগ্রিতে দাঁড়িয়েছে। তবে সূর্যের দেখা পাওয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাসের কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে শৈত্যপ্রবাহের কারণে হঠাৎ হাড়কাঁপানো এ তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। বেলা বাড়লেও ঘর থেকে বের হতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়ছে জনজীবন।
শহরের খড়কি এলাকার রিকশাচালক নূর হোসেন বলেন, গত তিন-চার দিন যে পরিমাণ শীত পড়ছে; তাতে বাইরে রিকশা চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রিকশা না চালালে ভাত জুটবে না; তাই বাধ্য হয়ে পথে নামতে হয়েছে।
শহরের বেজপাড়া এলাকার আবু সাঈদ বলেন, শৈতপ্রবাহের কারণে সকালে সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর ক্ষেত্রেও ভাবতে হচ্ছে। তীব্র শীতে ঠান্ডা লেগে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত না হয়।
এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাঁচি-কাশিসহ কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অপরদিকে শীতের কারণে সারাদিনই গরম পোশাক পরে মানুষজনকে ঘুরতে দেখা যায়। শীতকালীন রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে গরম পানি পান করাসহ গরম কাপড় ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা আবদুস সামাদ বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীর চাপ থাকলেও হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
এদিকে তীব্র শীতে কদর বেড়েছে গরম কাপড়ের। শীত নিবারণে মানুষ ছুটছে গরম কাপড়ের খোঁজে। গত তিনদিন ধরে শহরের পুরনো কাপড়ের নিক্সন মার্কেট ও কালেক্টরেট মার্কেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
পুরানো কাপড় মাকের্টের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, বাবু রহমান বলেন, শীত পড়ায় প্রচুর পরিমাণে বেলভাঙা কাপড় বিক্রি হচ্ছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের গরম কাপড়ে চাহিদা বেশি।
যশোর সদর উপজেলার চুড়মনকাটি ইউনিয়নের আবদুলপুর গ্রামের কৃষক আমিন উদ্দিন বলেন, শীতে ঠান্ডা লেগে দুদিন ধরে গায়ে জ্বর। তারপরেও ঠান্ডায় মাঠে আসতে হয়েছে। মাঠে কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না।
যশোর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান বলেন, কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড শীত পড়ছে। এতে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। প্রশাসন শীতার্ত মানুষের পাশে থেকে সাধ্যমত সহযোগিতা করছে।