করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর থেকেই চীনের বিরুদ্ধে কোভিড সংক্রান্ত তথ্য গোপন করার অভিযোগ বারবারই জানিয়ে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে, চীন সব সময়ই তাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বেইজিংয়ের দাবি, ভাইরাসটি শনাক্তের শুরুর থেকেই দেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে সব তথ্য প্রকাশ করছে চীন। এ নিয়ে কোনো তথ্য গোপন করা হয়নি।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘যে দিন থেকে করোনাভাইরাস শুরু হয়েছে, সেই দিন থেকে সম্পূর্ণ খোলাখুলিভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে সব তথ্য আন্তর্জাতিক সংগঠনকে জানিয়ে আসছে চীন। আমরা আশা করব, বিশ্বে অতিমারি রোধে ডব্লিউএইচও সচিবালয় একটি বিজ্ঞানভিত্তিক, সঠিক ও সদর্থক ভূমিকা পালন করবে।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ৯ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ডব্লিউএইচও’র সঙ্গে তিনটি বৈঠক করেছে চীন। আরও একটি বৈঠক শিগগিরেই অনুষ্ঠিত হবে। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্যও দেওয়া হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে।
গত তিন বছর ধরে ‘জিরো কোভিড’ নীতি বজায় ছিল চীনে। গোটা বিশ্ব স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও চীন ফেরেনি। দেশ করোনাশূন্য না হওয়া পর্যন্ত তারা নিয়মকানুন শিথিল করতে নারাজ ছিল। লকডাউন, মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি, সবই চালু ছিল। সম্প্রতি লকডাউন থাকাকালীন একটি বাড়িতে আগুন লাগে। কঠোর নিয়মের জেরে বাড়ি থেকে বেরোতে পারেননি বাসিন্দারা। আগুনে পুড়ে মারা যান তারা। এর পরেই কোভিডবিধি প্রত্যাহারের দাবিতে চীনজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। চাপের মুখে সরকার রাতারাতি সব নিয়ম তুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে করোনা সংক্রমণ ঢেউ আছড়ে পড়ে চীনে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এতদিন গৃহবন্দী থাকায় মানুষের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি। টিকাকরণও যথাযথ হয়নি। তবে চীনের দাবি, ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটলেও মৃত্যু নেই দেশে।
এদিকে, সম্প্রতি চীনের একটি সরকারি বৈঠকের রিপোর্ট ফাঁস হয়ে যায়। তাতেও দেখা যায়, দেশটিতে লাখ লাখ সংক্রমণের তথ্য গোপন করা হচ্ছে। এই রিপোর্ট ফাঁসের পরে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হবে না। যদিও ডব্লিউএইচও বারবার করে চাপ দিতে থাকে। সংস্থাটি জানিয়েছে, অতিমারি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে চীনের ভেতরের খবর জানা জরুরি। দিনে কত সংক্রমণ, কত জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, কত জনের মৃত্যু হচ্ছে, রোগের চরিত্র কেমন- এসব তথ্য বিশদ জানতে চায় ডব্লিউএইচও। যদিও এত দিন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। শেষমেশ আজ প্রথম এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছে চীন।
ডব্লিউএইচও’র কর্মকর্তা মাইক রায়ান বলেন, চীন সংক্রমিতের সংখ্যা, হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে। তবে গত ১০ দিনে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। চীন তাদের সঙ্গে আলোচনা ও তথ্য আদানপ্রদান বাড়িয়েছে।
সদ্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে চীন। বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে দেশবাসীকে। কিন্তু বেশিরভাগ দেশ চীনা পর্যটকদের জন্য কড়াকড়ি শুরু করেছে। ভারত, আমেরিকা, তাইওয়ান, জাপানে প্রবেশের জন্য চীনা ব্যক্তিদের কোভিড নেগেটিভ হওয়া বাধ্যতামূলক করেছে।