‘এ মুহূর্তে বিপিএল খেলতে ঢাকায় পা রাখা সবচেয়ে সবচেয়ে নামি ও বড় তারকা কে?’ শেরে বাংলার প্রেস বক্সে বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের মধ্যে এ প্রশ্ন ওঠলো।
শেষ পর্যন্ত উত্তর বেরিয়ে এলো সুনাম, সুখ্যাতি আন্তর্জাতিক পরিচিতি ধরলে শোয়েব মালিক। তাও তার গায়ে টেস্ট আর ওয়ানডেতে সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের তকমা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও পাকিস্তানের মূল দলের বাইরে।
সব হাতড়ে পাওয়া গেল দু’জনার নাম। একজনের মেধা, প্রতিভা আর টি-টোয়েন্টির কারিশমা বেশ ভালো। তবে ডাক নাম তুলনামূলক কম; ডেভিড মালান, অন্যজন সিকান্দার রাজা।
ভাবুন একবার। এখনও পর্যন্ত এবারের বিপিএলে তারাই শীর্ষ ও নামী তারকা। অথচ এক সময় এই বিপিএলে ছিল তারার মেলা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অনেক বড় বড় তারকা ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, এবি ডি ভিলিয়ার্স, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, মারলন স্যামুয়েলস, আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারিন, কাইরন পোলার্ড, শহীদ আফ্রিদিরা অংশ নিয়েছেন এই বিপিএলে।
তাদের সরব উপস্থিতি ও মাঠ মাতানো নৈপুণ্যে মুখরিত থাকতো শেরে বাংলা আর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম; কিন্তু সময়ের প্রবাহমানতায় তারা কেউ নেই।
শুধু তারকা ক্রিকেটারের কমতিই নয়, নানা কারণেই বিপিএল এর আকর্ষণ কমেছে। ডিআরএস না থাকায় আয়োজনের সাফল্য নিয়েই আছে বড় ধরনের সংশয়। তার সাথে যুক্ত হয়েছে অনিয়মে ভরা বিপিএলের আয়োজন নিয়ে দেশের দুই প্রধান ক্রিকেটার ও সেরা তারকা মাশরাফি এবং সাকিবের অসন্তোষ।
বিপিএল মাঠে গড়ানোর ঠিক আগে দেশের প্রধান দুই তারকার বিপিএলের মান, আয়োজন, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে কড়া সমালোচনা ও হতাশায় গোটা দেশেই বিপিএল নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
সব মিলিয়ে শুরুর আগে উৎসব উৎসব ভাবের সমান্তরালে বইছে ‘সমালোচনার মাতাল হাওয়া।’ এককথায় অনিশ্চিত যাত্রার অপেক্ষায় এবারের বিপিএল। শেষ পরিণতি কী হবে? এবারের আসর কতটা সাড়া জাগাবে? মাঠের লড়াই কতটা জমবে? তার উত্তর দেবে সময়।
তবে নতুন ইংরেজী বছরের প্রথম আর পৌষের তৃতীয় সপ্তাহে হাঁড় কাপানো শীতে যাত্রা শুরু হচ্ছে বিপিএলের নবম আসরের। আজ (৬ জনুয়ারি) শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে পর্দা উঠবে এবারের আসরের।
প্রথমদিন শুক্রবার মাঠের লড়াইয়ের প্রথমদিন উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্স আর শুভাগত হোমের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। বেলা আড়াইটায় শুরু হবে এই ম্যাচ।
পরের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই অন্যতম ফেবারিট চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও রংপুর রাইডার্স। হোম অব ক্রিকেটে শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মুখোমুখি হবে ইমরুল কায়েস আর নুরুল হাসান সোহানের দল।
৭ দলের এ আসরের সবকটা ম্যাচ ঘরে বসে টিভিতে দেখা যাবে। নাগরিক টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে এবারের বিপিএল। রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ছাড়াও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম আর সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও হবে এবারের বিপিএল।
ঢাকার প্রথম পর্ব শেষে ১৩ জানুয়ারি শুরু হবে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় পর্ব। সেখান থেকে বিপিএল আবার ফিরে আসবে ঢাকায়। ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি ২ দিন খেলা হবে। তারপর বিপিএল চলে যাবে সিলেটে। সেখানে খেলা শুরু ২৭ জানুয়ারি। চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর শেষ পর্বটা পুরো শেরে বাংলায়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল।
আইপিএল (চ্যাম্পিয়ন দল গতবার পেয়েছে ২০ কোটি রুপি আর রানার্সআপ ১৩ কেটি রুপি) আর বিগ ব্যাশের সঙ্গে তুলনাই চলে না। তারপরও পাকিস্তানের পিএসএল আর ক্যারিবীয়ান প্রিমিয়ার লিগের তুলনায়ও বিপিএলের প্রাইজমানি কম। এবার প্রায় ৪ কোটি টাকার প্রাইজমানির কথা বলা হচ্ছে। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য ২ কোটি আর রানার্সআপ দলকে ১ কোটি টাকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
৭ দলের এবারের আসরে শেষ হাসি হাসবে কে? ১৬ ফেব্রুয়ারি চ্যাস্পিয়ন ট্রফি হাতে বিজয়ীর হাসি হাসবেন কোন অধিনায়ক? চারবারের বিজয়ী মাশরাফি কি আবার চ্রাম্পিয়ন হতে পারবেন? ইমরুল কায়েস তৃতীয় বারের মতো ট্রফি উঁচিয়ে ধরবেন? নাকি দেশ সেরা সাকিব আবার হবেন চ্যাম্পিয়ন? নাকি সোহানের হতে প্রথমবার উঠবে শিরোপা?
কাগজে কলমের লাইন আপের আলোকে স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইমরুল, লিটন, মোস্তাফিজের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, নুরুল হাসান সোহানের রংপুর রাইডার্স আর সাকিব, রিয়াদ, মিরাজের ফরচুন বরিশালকে এগিয়ে রাখছেন। তাদের মতে এই তিন দলের মধ্যেই মূল লড়াই সীমিত থাকবে। পাশাপাশি শিরোপা যুদ্ধে খুলনা টাইগার্সকেও সম্ভাবনাময় দল ভাবা হচ্ছে।
মাশরাফির সিলেটও খুব পিছিয়ে নেই। তবে শুভাগত হোমের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আর নাসির হোসেনের ঢাকা ডোমিনেটরসকে শুরুতে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কাগজে কলমের সাথে মাঠের হিসেব কতটা মেলে?