র্যাবের নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে ঢাকা-ওয়াশিংটন টানাপড়েনের মধ্যেই আগামী ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তার আগেই আজ শনিবার ঢাকায় এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লোবাচার।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুতেই বাইডেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের দুই প্রতিনিধির ঢাকা সফরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিবে দুই দেশ। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনার পাশাপাশি সমুদ্র নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু ও ইউক্রেন ইস্যুতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ঢাকার পক্ষ থেকে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবর্তন বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক আইলিন লোবাচার চারদিনের বাংলাদেশ সফরে বাইডেন প্রশাসনের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিবেন। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।
সফরকালে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া মার্কিন প্রতিনিধি দলটি ঢাকা আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। সফর শেষে আগামী ১০ জানুয়ারি তারা শ্রীলঙ্কা যাবেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা ও ওয়াশিংটন সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বাংলাদেশবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু নিয়মিত সফরে ঢাকায় আসছেন। তবুও নানা দিক থেকে তার আসন্ন সফরটি গুরুত্বের সাথে দেখছে ঢাকা ও ওয়াশিংটন। তিনি এমন সময়ে আসছেন যখন সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ঢাকায় সংঘটিত এক অপ্রীতিকর ঘটনায় অস্বস্তিতে রয়েছে দুই দেশ।
স্বভাবতই মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর সফরে ঢাকায় কর্মরত সে দেশের কূটনীতিক ও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হবে। যদিও সরকার ইতোমধ্যেই নিরাপত্তার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে ঢাকা ও ওয়াশিংটনে আশ্বস্ত করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছেন, ডোনাল্ড লু‘র সফরের সময় র্যাবের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বাংলাদেশের জিএসপি পুনর্বহাল, শান্তি রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার সুরক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।
তবে মার্কিন কূটনীতিকদের নিরাপত্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ ওয়াশিংটনের উদ্বেগের বিষয়গুলোতেও আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দুই মার্কিন প্রতিনিধির সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, তাদের সফরের সময় দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলোতে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো। এ সম্পর্ক আরও জোরদারে কথা হবে। দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তি দূর করতে এ সফর সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।