বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ৬ মাসের জামিন দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের করা জামিন বাতিলের আবেদনটিও নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত।
এই আদেশের ফলে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের মুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবীরা। রোববার (৮ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। মির্জা ফখরুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাসের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল ও অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিয়ন।
গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে ছয় মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। একই সঙ্গে কেন তাদের স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুলও জারি করেন আদালত।
এরপর তাদের জামিন স্থগিত চেয়ে বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকালে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের চেম্বার আদালত বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিষয়টি শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। আর আপিল বিভাগে শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিপক্ষকে নিম্ন আদালতে জামিননামা দাখিল না করতে বলা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় রোববার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।
বিএনপি নেতাদের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন জানান, হাইকোর্টের জামিন বহাল। তাদের স্থায়ী জামিন প্রশ্নে হাইকোর্ট যে রুল দিয়েছিলেন, তা একমাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়ে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের করা জামিন বাতিলের আবেদনটির নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ফখরুল ও আব্বাসের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ আমাদের কথা শুনেছেন এবং রাষ্ট্র পক্ষের কথাও শুনেছেন। উভয় পক্ষকে শুনে চেম্বার আদালত যে আদেশটি দিয়েছিলেন, সেই আদেশটি ভ্যাকেট করে দিয়েছেন।
‘আরেকটি আদেশ দিয়ে বলছেন যে, (হাইকোর্টের) রুলটি একমাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য। সুতরাং হাইকোর্ট বিভাগ যে জামিন দিয়েছেন, সেটা বহাল আছে।’
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, আপিল বিভাগের এই আদেশ পাওয়ায় আমরা বেইলবন্ড ফার্নিশ করব। আমরা মনে করি বেইলবন্ড ফার্নিশ করা সাপেক্ষে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে।
গত ৮ ডিসেম্বর দিনগত রাতে নিজ বাসা থেকে ফখরুল ও আব্বাসকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরদিন (৯ ডিসেম্বর) পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পল্টন থানায় করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে। এসময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্রেফতার বিএনপি নেতাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেদিন থেকে তারা কারাগারেই রয়েছেন।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ও স্থান নির্ধারণ নিয়ে উৎকণ্ঠা-উত্তেজনার মধ্যে ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে জমায়েত হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে হাতবোমা ছোড়া হয়েছে অভিযোগ তুলে তখন ওই কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ, গ্রেপ্তার করা হয় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কয়েকশ নেতাকর্মীকে।
পরদিন রাতে বাড়ি থেকে মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়, একই রাতে গ্রেপ্তার করা হয় মির্জা আব্বাসকেও। ৯ ডিসেম্বর পুলিশের উপর হামলা ও উস্কানি দেওয়ার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঠানো হয় আদালতে। তাদের পক্ষে জামিন আবেদন হলেও তা নাকচ করে পাঠানো হয় কারাগারে।