ঢাকায় আসছেন চীনের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গাং। ৯ জানুয়ারি (সোমবার) দিবাগত রাতে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির জন্য তিনি ঢাকায় অবতরণ করবেন। আশা করা হচ্ছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন। এছাড়া বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের কথা রয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ লাভের পর এটিই তার প্রথম বিদেশ সফর। এবারের সফরে তিনি আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করবেন।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও এটি যাত্রাবিরতি, তারপরও বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে, সেটি বিবেচনায় এটি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, কূটনীতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে বার্তা দিয়ে থাকে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফরে বাংলাদেশে যাত্রাবিরতিকেও সম্পর্ক গভীর করার একটি বার্তা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
শহীদুল হক বলেন, এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে অপরকে আরও ভালোমতো বোঝার সুযোগ পাবেন। চীনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের একাধিক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এটিই হবে প্রথম বৈঠক।
২০১৭ সালের পুনরাবৃত্তি
২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেছিলেন। এর তিন মাস পরে ২০১৭ সালের ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে একইভাবে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আফ্রিকা যাওয়ার পথে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকায় যাত্রাবিরতি করেছিলেন। ওই সময়ে শহীদুল হক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
শহীদুল হক বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে মূলত আমরা কথা বলেছিলাম। যদিও বেশিরভাগ কথা তিনি বলেছেন এবং আমি শুনেছি।’
নতুন ভূ-রাজনীতি
সাম্প্রতিক সময়ে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। একইসঙ্গে ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের কারণে এশিয়া ও অন্যান্য মহাদেশে নিজেদের অবস্থান আরও বেশি সংহত করছে চীন।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ওয়াং ই’র মতো অভিজ্ঞ কূটনীতিককে অন্য দায়িত্ব দেওয়ার ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের দ্বন্দ্ব নিরসনে তিনি বড় ভূমিকা রাখবেন, এটি আশা করা যায় বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এখন আগের যেকোনও সময়ের থেকে ভালো। গত ডিসেম্বরে সাত বছর পর সৌদি আরব সফর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শুধু তাই না, ওই অঞ্চলের অন্য পাঁচটি দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও রিয়াদে বৈঠক করেছেন তিনি। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভাব বলয় রয়েছে, সেখানে ভাগ বসানোর একটি চেষ্টা করেছে বেইজিং।
অপরদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অর্থাৎ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে চীন। এককথায় বলা যায়, আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে চীন অনেক বেশি শক্তিশালী এবং অনেক বেশি যোগাযোগ রাখছে বহির্বিশ্বের সঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জানান।