দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৬। ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। অবশ্য পরে তেমন কিছু না ঘটায় সেই সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার তানিম্বার অঞ্চলে ৭.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে বলে ইউরোপিয়ান-মেডিটেরিনিয়ান সিমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯৭ কিলোমিটার (৬০.২৭ মাইল) গভীরে এই ভূমিকম্প হয়।
অন্যদিকে পৃথক এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলে সংঘটিত ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের জেরে সতর্কতা জারি করা হলেও কোনও সুনামি শনাক্ত হয়নি।
রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার তানিম্বার দ্বীপপুঞ্জে শক্তিশালী ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পর দেশটি প্রায় তিন ঘণ্টার জন্য সুনামির সতর্কতা জারি করে রাখে। কিন্তু এই সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন রেকর্ড করা হয়নি এবং আর তাই পরে সেই সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়।
ভূমিকম্পের পরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে অন্তত চারটি আফটারশক রিপোর্ট করা হয়েছে যেগুলো উত্তর অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশেও অনুভূত হয়েছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার প্রাথমিক রিপোর্টে ভূমিকম্পের পর প্রধানত ভবনগুলোর হালকা থেকে মাঝারি ক্ষতির ইঙ্গিত রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার ভূ-পদার্থবিদ্যা সংস্থা বিএমকেজি জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে ৭.৫ মাত্রার বলে পরিমাপ করা এই ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার গভীর রাত ২টা ৪৭ মিনিটে ভূপৃষ্ঠের ১৩০ কিলোমিটার (৮০.৭৮ মাইল) গভীরতায় আঘাত হানে। পরে ভোর ৫টা ৪৩ মিনিটে সুনামির সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়।
বিএমকেজি’র প্রধান দ্বিকোরিতা কর্নাবতী একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের চারপাশে আমাদের চারটি জোয়ার পরিমাপক পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে … সমুদ্রপৃষ্ঠের কোনও অসঙ্গতি শনাক্ত করা যায়নি বা কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনও হয়নি।’
অবশ্য উপকূলের কাছাকাছি বসবাসকারী লোকদের বিএমকেজি’র পরামর্শ মাথায় নিয়ে চলাচলে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ইউরোপিয়ান-মেডিটেরিনিয়ান সিমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.৬ হিসাবে রেকর্ড করলেও প্রাথমিকভাবে সংস্থাটি রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.৭ বলে জানিয়েছিল। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপও এই ভূমিকম্পটিকে ৭.৬ মাত্রার বলে জানিয়েছে।
বিএমকেজি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর শক্তিশালী চারটি আফটারশক রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী আফটারশকের মাত্রা ছিল ৫.৫।
এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীপদেশ ইন্দোনেশিয়ার জন্যসংখ্যা সাড়ে ২৭ কোটির বেশি। ভূতাত্ত্বিক অবস্থার কারণে নিয়মিতই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত ও সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে থাকে।
গত বছরের ২১ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে প্রাথমিকভাবে ৫৬ জনের প্রাণহানির তথ্য জানানো হয়। পরে এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১০ জনে। আহত হয়েছিলেন আরও বহু মানুষ।
এর আগে ২০০৯ সালে পাদাংয়ে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেই সময় প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে এক হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং আহত হন আরও অনেকে। এছাড়া ভূমিকম্পে বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রশান্ত মহাসাগরের তথাকথিত ‘রিং অব ফায়ারে’ ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান হওয়ায় দেশটিতে প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা দেখা যায়। এখানে টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষ ঘটে। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, জাপানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশই এ কারণে ভূমিকম্পের অত্যধিক ঝুঁকিতে আছে।
২০০৪ সালে সুমাত্রার উপকূলে ৯ দশমিক ১ মাত্রার মাত্রার ভয়াবহ একটি ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের পরপর আঘাত হানে সুনামি। তখন ওই অঞ্চলে ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে ইন্দোনেশিয়ায় ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।