ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের জেলা জজসহ দুই বিচারকের অপসারণ ও নাজিরের শাস্তির দাবিতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দাবি মেনে নেওয়া হবে- আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এমন আশ্বাসে আগামী রোববার থেকে আদালতে ফিরবেন বলে জানিয়েছে আইনজীবী সমিতি।
তবে আদালতে অচলাবস্থা পুরোপুরি শেষ হচ্ছে না। কারণ, রোববার থেকে আদালতে ফিরলেও জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে যাবেন না তারা।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আইনজীবীদের একটি দল আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে দেখা করেছি। মন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আইনমন্ত্রীর নির্দেশে আদালতে ফিরে যাব। তবে জেলা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত প্রত্যাহার অব্যাহত রাখব।
এর কারণ জানতে চাইলে তানভীর ভূঞা বলেন, ওই দুটি আদালত নিয়ে সমস্যা শুরু, ওই দুটি আদালতের ঘটনা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই ওই আদালতগুলোতে যাব না আমরা। আগামীকাল শনিবার বিকেলে সাধারণ সভা হবে। তিনি বলেন, দুই বিচারককে প্রত্যাহারের পর আদালতে আইনজীবীরা ফিরবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুন নূর, ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাবেক সভাপতি নাজমুল হোসেন ও শফিউল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম খান, আইনজীবী গোলাম সারওয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা পুরো ঘটনা আইনমন্ত্রীর কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে তুলে ধরেন।
এর আগে মঙ্গলবার আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিল বরাবর লিখিত দেন। মৌখিক ও লিখিত অভিযোগে দুই বিচারকসহ তিনজনের প্রত্যাহার দাবি করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার গুলশানের কার্যালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে তারা দেখা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ, বিচারকের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগানসহ বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে ২ দফায় ২৪ আইনজীবীকে উচ্চ আদালতে তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে এজলাসে ঢুকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের ঘটনায় বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের বেঞ্চ ৬ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন।
এজলাস চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচারকাজ বিঘ্নিত করার অভিযোগে ১০ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ আইনজীবীর প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। তাদেরকে ২৩ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৫, ৮ ও ৯ জানুয়ারি প্রথম দফায়, ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আইনজীবী সমিতি তিন কার্যদিবস করে মোট ছয় দিন কর্মবিরতি পালন করে। দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনজীবী সমিতির ভবনের দ্বিতীয় তলায় আইনজীবীদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে দাবি পূরণ না হওয়ায় আরও তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতি বাড়ানো হয়। এরই মধ্যে আজ কর্মবিরতির কর্মসূচি আংশিক প্রত্যাহার করেছে আইনজীবী সমিতি।