চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি অর্থবছরে দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একবার বছরের প্রারম্ভে, আরেকবার বছরের মধ্যবর্তী সময়ে। মুদ্রানীতি সাধারণত মুদ্রার গতিবিধি প্রক্ষেপণ করে। এর অন্যতম কাজ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা। মূলতঃ মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করা হয়। এবারও একই উদ্দেশ্য নিয়েই প্রণয়ন করা হয়েছে মুদ্রানীতি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাবাজার ও সুদহার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নিয়ে মুদ্রানীতি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, এবারের মুদ্রানীতির ভঙ্গি হলো ‘সতর্কতামূলক সহায়ক’। সতর্কতামূলক বলা হচ্ছে এ কারণে যে, মূল্যস্ফীতি কমাতে ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়িয়ে চাহিদা কমানো হবে এবং অপ্রয়োজনীয় আমদানি কঠিন করা হবে এ মুদ্রানীতির মাধ্যমে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। বৈশ্বিক মন্দার কারণে সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতি; সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতি কতটা সফল হয় সেটাই দেখার বিষয়।
নতুন মুদ্রনীতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো, আমানতের সর্বনিম্ন সুদহারের সীমা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে মুদ্রানীতিতে বাড়ানো হয়েছে ভোক্তাঋণের সুদহার, যা ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বাড়বে দেশের মধ্যবিত্তের ঋণের খরচ। শিল্পঋণ ও অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার বাড়ানো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আমানতের সুদহার উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং ঋণ সুদহার কিছুটা শিথিল করায় তা আমানতের সুদহার বাড়াতে সহায়তা করবে। উল্লেখ্য, ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদহার তুলে নেওয়ার দাবি করে আসছিল অনেক দিন ধরে।
সার্বিক মূল্যস্ফীতির ওপর ভূমিকা রাখে খাদ্যপণ্যের দাম। অর্থাৎ খাদ্যমূল্য সহনীয় থাকলে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কম থাকে। এমতাবস্থায় আমরা আশা করব, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, তা প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবেই প্রয়োগ করবে।