রাজধানী ঢাকার মহাখালীর আমতলী এলাকায় প্রাইভেটকার থামিয়ে র্যাব সদস্যের নেতৃত্বে ছিনতাই করতে গিয়ে পুলিশের হাতে তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতার র্যাব সদস্য উত্তরা র্যাব-১ এ সৈনিক পদে চাকরিরত। তার নাম আল মোমেন । ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে এরই মধ্যে বনানী থানায় মামলা হয়েছে। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বনানী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার র্যাব সদস্য আল মোমেন (২৬) ও অন্য দুজন হলো আরিয়ান আহমেদ জয় (২৩) ও মো. ফরহাদ হোসেন (২২) । এছাড়া জালাল (২৫) নামে আরও একজনকে আসামি করা হয়েছে। জালালকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মো. শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাত দশটার দিকে তার বন্ধু তারিকের সঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেখা করার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। এসময় শহিদুলের ভাগ্নে রিয়াজ সঙ্গে ছিলেন। তারা একটি সোনালি রঙের প্রাইভেটকারে রওনা দেন। রাত সোয়া বারোটায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় তারা। সেখানে বন্ধু তারিকের সঙ্গে দেখা করা শেষে আবার একই প্রাইভেটকারে রাত পৌনে দুইটার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আমতলী ট্রাফিক বক্স বরাবর মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর রাত আনুমানিক সোয়া দুইটায় পৌঁছালে আকস্মিকভাবে একটি প্রাইভেটকার তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটির গতিরোধ করে।
এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, প্রাইভেটকারে থাকা তিনজন ব্যক্তি নেমে তাদের প্রাইভেটকারের সামনে এসে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে সাথে থাকা মালামাল লুণ্ঠনের চেষ্টা করে। এসময় তারা ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন স্থানীয় লোকজন আরিয়ান আহমেদ জয় নামে একজনকে আটক করে। এ সময় অন্য আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়া হলে বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান ঘটনাস্থলে এসে আরিয়ান রহমান জয়কে আটক করেন। এ সময় তার কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, একটি স্টিলের তৈরি হ্যান্ডকাপ, বিডি পুলিশ লেখা একটি ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট, ইংরেজিতে র্যাব লেখা একটি কালো রঙের জ্যাকেট ছিল।
পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আরিয়ান তার নাম ঠিকানা-ঠিকানা দেয় এবং তার সহযোগীদের নামসহ অন্যান্য তথ্য দেয়। বনানী থানা পুলিশ মামলার বাদীকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে আল মোমেন এবং ফরহাদ হোসেনকে আটক করে।
রাতে ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার পথে এ ঘটনা দেখে সামনে এগিয়ে আসেন পুলিশ সদস্য কনস্টেবল নাঈম। এ সময় তিনি বলেন, র্যাব লেখা জ্যাকেট পরা অবস্থায় ছিলেন একজন। গাড়িতে থাকা দুজনকে মারধর করছিল তারা। এ অবস্থায় ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুনে আমি মোটরসাইকেল থামিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করি। এ সময় র্যাবের জ্যাকেট পরা ব্যক্তি হাতের পিস্তলটি গাড়ির পেছনে রেখে রাস্তার ওপারে চলে যায়, একজন আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, আরেকজন অন্যদিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতার জয় পুলিশকে জানায়, র্যাবের মোমেনের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি এসেছিলেন। জয় নিজেকে র্যাবের সোর্স বলে দাবি করেন।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া বলেন, ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে র্যাবে কর্মরত একজন সদস্যসহ তিনজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। র্যাব সদস্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকরি করায় থানা পুলিশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে চক্রটি। এর আগে তারা এরকম ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা জানতে তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যথপোযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আল মোমেন সৈনিক পদে ২০২১ সাল থেকে র্যাব-১ এ কর্মরত রয়েছেন।