রোহিঙ্গাদের ওপর বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি

কক্সবাজার প্রতিনিধি

রোহিঙ্গা ক্যাম্প
রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফাইল ছবি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশ এলাকায় অব্যাহত রয়েছে গোলাগুলি। এ অবস্থায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তুমব্রু সীমান্তে।

পুলিশ বলছে, শূন্যরেখায় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নানা সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। তারা বাড়িঘরে আগুন দেওয়াসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। ক্যাম্পের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

universel cardiac hospital

গত বুধবার সকাল থেকে শূন্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশে দুটি গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনায় একজন নিহত এবং এক শিশুসহ দুজন আহত হন। গোলাগুলি শুরুর পর মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা দুই শতাধিক রোহিঙ্গা তুমব্রু স্কুলে গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করতে দেখা গেছে। আবার অনেক রোহিঙ্গা গোপনে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এরপর গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত গোলাগুলি বন্ধ ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর ফের গোলাগুলি শুরু হয়। গতকাল সকালেও থেমে থেমে গুলিবিনিময় হয়েছে। এতে সীমান্তবাসীদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে কোনারপাড়া শূন্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশ এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরএসওর সদস্যদের প্রকাশ্যে দেখা গেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোয় রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তদের আনাগোনা বন্ধে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) সংশ্লিষ্টরা।

শূন্যরেখায় সংঘাতের পর থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প থেকে বাইরে যেতে না পারে এবং বাইরের কেউ ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে সেজন্য এপিবিএনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, ক্যাম্পের প্রতিটি প্রবেশপথে স্বাভাবিকের চেয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরেও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। বাইরে থেকে কোনো রোহিঙ্গার ক্যাম্পে প্রবেশের তথ্য তাদের কাছে নেই বলেও জানান তিনি। ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নানা সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। এসব গোষ্ঠী বসতঘরে অগ্নিসংযোগ, আধিপত্য বিস্তারে খুন-হামলাসহ নানা অপরাধ ঘটাচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণে এপিবিএন আগে থেকে তৎপর রয়েছে। এখন নতুন করে সীমান্তে সংঘাতের জেরে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি ক্যাম্পের প্রবেশপথে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা জানিয়েছেন, তিনি নতুন করে গোলাগুলির খবর পাননি। তিনি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। শূন্যরেখায় নতুন করে গোলাগুলির খবর আমার জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, আপাতত আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা কড়া নজরদারিতে রেখেছেন। এ ছাড়া সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি সতর্ক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নিতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

রোমেন জানান, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে শূন্যরেখা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বা অন্য কারও নিয়ন্ত্রণে নয়। ওখানে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে, কারা অবস্থান করছে, বলা যাচ্ছে না। ঘটনার পর অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। সিদ্ধান্তের পর রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তবে বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

২০১৭ সালের আগস্টে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এর মধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে অবস্থান নিলেও কিছু রোহিঙ্গা শূন্যরেখার ক্যাম্পটিতে বসবাস করত। যে ক্যাম্পটিতে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়, আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা সহায়তা না করলেও আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি) সহায়তা করে আসছিল। আইসিআরসির তথ্যমতে, শূন্যরেখার ক্যাম্পটিতে ৬৩০টি ঘরে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।

শেয়ার করুন