অমর একুশে বইমেলার আমন্ত্রণপত্র নিয়ে হুলুস্থুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলা একাডেমি
সংগৃহীত ছবি

অমর একুশে বইমেলা ২০২৩–এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে দ্বিতীয় দফায় আমন্ত্রণপত্র ছাপাতে হয়েছে বাংলা একাডেমিকে। আজ বুধবার দুপুরে নতুন আমন্ত্রণপত্র পৌঁছেছে একাডেমির কার্যালয়ে। যেখানে বইমেলা উদ্বোধনের অনুষ্ঠানসূচি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম দফায় সাড়ে ছয় হাজার আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়েছিল, যা একদিনের সিদ্ধান্তে বাতিল করতে হয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে।

নতুন আমন্ত্রণপত্রে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে সরকারি মনোগ্রাম। এতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অধিকার খর্ব হলো কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। এর ফলে অমর একুশে বইমেলায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

universel cardiac hospital

গত ১০ বছরের বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, আগে কোনোটিতেই কোনো মন্ত্রণালয় বা সরকারের মনোগ্রাম ব্যবহার করা হয়নি। বইমেলার আমন্ত্রণপত্র নিয়ে এ গোলমেলে পরিস্থিতি অনেকের নজর কেড়েছে। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

ঘটনা অনুসন্ধানে জানা গেছে, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও সংস্কৃতিসচিব আবুল মনসুর সোমবার বিকেলে বইমেলার প্রস্তুতি দেখতে বাংলা একাডেমিতে যান। একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাকক্ষে বসে বইমেলা আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আসতে বলেন তারা। এরপর সেখান থেকেই সমস্যার শুরু হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা একাডেমির দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কর্মকর্তারা উপস্থিত হলে সচিব আবুল মনসুর বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসতে বলেন। আমন্ত্রণপত্র দেখে তিনি কর্মকর্তাদের ধমকানো শুরু করেন।

আমন্ত্রণপত্রের শেষ পৃষ্ঠায় আয়োজনের জায়গায় বাংলা একাডেমির পাশাপাশি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের লোগো সংযুক্ত করে নতুন করে আমন্ত্রণপত্র ছাপার নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যানারেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের লোগো ব্যবহারের নির্দেশ দেন সচিব।

এ সময় তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনের একটি প্রতিষ্ঠান। একাডেমির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সচিব রূঢ় আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন সভায় উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তা।

বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংস্কৃতিসচিবের এ আচরণ ও আমন্ত্রণপত্র নিয়ে তার নির্দেশনার বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীরা একে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ওপর অনৈতিক হস্তক্ষেপ আখ্যায়িত করেন।

এরপর মঙ্গলবার বিকেলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আমন্ত্রণপত্রে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মনোগ্রাম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম ব্যবহার করে বাংলা একাডেমিকে আমন্ত্রণপত্র ছাপানোর মৌখিক নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এক রাতের মধ্যে নতুন করে সাড়ে ছয় হাজার আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়েছে।

শেয়ার করুন