দুর্নীতিবিরোধী অভিযান: ইউক্রেনে মন্ত্রী-কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জেলেনস্কির শীর্ষ উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়া কিরিলো তিমাশেঙ্কো

চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ইউক্রেনের সরকারের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী ও বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন কর্মকর্তারা একের পর এক পদত্যাগ করছেন। রোববার দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শীর্ষ উপদেষ্টা কিরিলো তিমাশেঙ্কো তার পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।

একই দিন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন দেশটির উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভাচিস্লাভ শোপালভ, উপ প্রসিকিউটর জেনারেল ওলেস্কিয়ে সিমোনেঙ্কোও।

এছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভ এখনও পদত্যাগ করেননি, তবে তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু ‍হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) যে তিন জন পদত্যাগ করেছেন, তাদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন কিরিল তিমাশেঙ্কো। ২০১৮ সালে জেলেনস্কির নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার প্রধান সহকারী ছিলেন তিনি। নির্বাচনে জেলেনস্কির জয়ের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান তিমাশেঙ্কা। পাশপাশি দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের প্রাদেশিক ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা দেখাশোনা করার দায়িত্বেও ছিলেন কিরিলো।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলেনস্কিরম এই শীর্ষ উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূতভাবে দামি গাড়ি ব্যবহার ও সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল। সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল তার নামও। তারপরই মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

অন্যদিকে সেনাবাহিনীর জন্য অস্বাভাবিক মূল্যে খাদ্য কেনার অভিযোগ উঠেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে এ অভিযোগে উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভাচিস্লাভ শোপালভ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়েছে। সেই তদন্তের মধ্যেই মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শোপালভ।

উপ প্রসিকিউটর জেনারেল ওলিস্কিয়ে সিমোনেঙ্কোর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগটি এখনও স্পষ্ট নয়। সরকারের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নিজের ইচ্ছায়’ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।

আগের দিন সোমবার ইউক্রেনের অবকাঠামো বিষয়ক উপ-মন্ত্রী ভ্যাসিল লজিন্সকিকে বরখাস্ত করা হয়। ৪ লাখ ডলার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে আছেন লজিন্সকি।

এদিকে, সোমবার এক ভিডিওবার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, আগামী দিনগুলোতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে রদবদল আসবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার, আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ, প্রতিরক্ষা ও নিরপত্তা বিভাগকে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

দুর্নীতির দীর্ঘ ইতিহাস আছে ইউক্রেনের। ২০২১ সালে জার্মানভিত্তিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দেশটিকে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম’ বলে উল্লেখ করেছিল। দুর্নীতির বিচারে টিআই’র তালিকাভুক্ত ১৮০টি দেশের মধ্যে ইউক্রেনের অবস্থান ছিল ১২২ তম।

সম্প্রতি ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছে ইউক্রেন। ইইউয়ের নেতারা জেলনস্কিকে বলেছেন— এই জোটের সদস্যপদ পাওয়ার প্রথমিক শর্ত হলো দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা। তারপরই এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদিয়ালাক বিবিসিকে জানিয়েছেন, অভিযানের প্রাথমিক তালিকায় যেসব মন্ত্রী-উপমন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের নাম আছে, তাদের বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অন্যান্য মন্ত্রী-উপমন্ত্রী-কর্মকর্তাদেরও সরকারি অনুমতি ব্যতীত বিদেশ ভ্রমণে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন