র্যাবের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয় একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক বিষয়। শুরু থেকেই এর সমাধানের (নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের) জন্য জোরালোভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
২৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র্যাব, আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মিশন নিয়মিতভাবে সমন্বয় সাধন করছে।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। সে সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হয়। পরে তারই আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরি। ওই সফরে সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাদের সমর্থনের অনুরোধ করি। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস গঠনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করি।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম সম্মেলন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি অব স্টেট মিশেল জে. সিসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ওই সময়ে পররাষ্ট্র সচিব মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত ডোনাল্ড লু এবং কাউন্সেলর ডেরেক এইচ চলেটসহ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
মন্ত্রী জানান, জাতিসংঘ সম্মেলন চলাকালে পররাষ্ট্র সচিব, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ককাসের তিনজন কো-চেয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান অংশগ্রহণ করেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে সাক্ষাতে র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয় আলোচনা হয় উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই সময় ডেনাল্ড লু বর্তমান র্যাবের কার্যক্রমের বিশেষ প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস আইনি সহায়তা দেওয়া প্রতিষ্ঠান সঙ্গে নিয়ে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে, যোগ করেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন।