কখনো নিজের পরিচয় দিয়েছেন সবুজ নামে, কখনোবা নারায়ণ। এমনকি ধর্ষণচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তারের পরও পুলিশকে নিজের আসল পরিচয় জানাননি। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে পালিয়ে যান তিনি। ওই আসামির অনুপস্থিতিতেই তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত। সঠিক পরিচয় না দেওয়ায় তাকে খুঁজে বের করতে একটু বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। তবে শেষ পর্যন্ত পার পাননি তিনি।
সাজার আদেশ পাওয়া ওই আসামির আসল নাম সুপন চন্দ্র দেবনাথ (২৫)। তার বাবার নাম রাধা কৃষ্ণ দেবনাথ। বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার হেসাখাল গ্রামে। গত বুধবার রাতে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ছাতিপট্টি এলাকার একটি সোনার দোকান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের খুলশী থানা-পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের শুরুর দিকে সুপন চন্দ্র কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকায় চলে আসেন। সেখানে নিজের পরিচয় দেন মো. সবুজ নামে। ঠিকানা দেন ফেনী। ওই বছরের ২৯ জুন এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার হন সুপন। পুলিশের কাছেও তিনি ভুয়া নাম–ঠিকানা দেন। উল্লেখ করেন, তার নাম সবুজ; বাবার নাম মো. আক্কাস, মা শেফালী বেগম; বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলায়।
মামলাটি তদন্ত করে সে বছর ৩০ সেপ্টেম্বর খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম আসামির নাম সবুজ উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দেন। এসআই জাহাঙ্গীর বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, আসামির দেওয়া নাম–ঠিকানা সঠিক আছে কি না, জানতে ফেনী পুলিশের কাছে বার্তা পাঠান তিনি। তবে সেখান থেকে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তাই সুবজ নামেই তিনি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন।
পরে ধর্ষণচেষ্টার ওই ঘটনায় গত ১৬ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৬ চট্টগ্রামের বিচারক সবুজ নামেই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তিনি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, সাজা পরোয়ানা পাওয়ার পর লালখান বাজার ও ফেনীর ঠিকানায় যোগাযোগ করলে, তা সঠিক নয় বলে জানা যায়। পরে লালখান বাজারে তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, সবুজের বাড়ি কুমিল্লায়। একপর্যায়ে তার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করি। সেটির সূত্র ধরে কুমিল্লা থেকে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, কুমিল্লায় যে স্বর্ণের দোকানে সুপন কাজ করছিলেন, সেখানে নিজেকে নারায়ণ নামে পরিচয় দিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য নিজের নাম–ঠিকানা গোপন রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।