প্রসঙ্গ: সিপিডির জরিপ

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি) দেশে ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের বিষয়ে রোববার যে জরিপ প্রকাশ করেছে, তা কিছুতেই জাতীয় প্রতিনিধিত্বশীল কোনো জরিপ নয়। বছরের বারো মাসের মধ্যে মাত্র চারমাসের (জরিপের সময়- ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই) খণ্ডিত চিত্র এবং দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে মাত্র চারটি জেলার (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামের ৭৪ জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ীর মতামত) গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপের মধ্য দিয়ে গোটা দেশে ব্যবসার সার্বিক চিত্রের ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়।

তবে সিপিডির বিশেষভাবে নির্বাচিত ও নির্ধারিত এলাকা, বা ব্যক্তিদের মধ্যে পরিচালিত জরিপকে আমরা ‘একেবারে গুরুত্বহীন’ বলে উড়িয়ে দিতে অনাগ্রহী। মত ও পথসহ সহযোগী বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সিপিডির দাবি- দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের অগ্রগতি ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়নি। এটি হয়তো স্থবির ছিল, বা আগের তুলনায় আরও খারাপ হয়েছে। এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে দুর্নীতিকে। গত বছর দুর্নীতিই ছিল ব্যবসায় উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। শুধু তাই নয়, ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে চ্যালেঞ্জ, দুর্বল আমলাতন্ত্র ও মূল্যস্ফীতিও ছিল ব্যবসার জন্য বাধা।’

universel cardiac hospital

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্নীতি ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মতো বিভিন্ন দিক থাকে। গত বছর বিশ্বজুুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার উত্থান-পতন ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে ব্যবসার জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব দেশের ব্যবসা খাতে কতোটা পড়েছে ২০২২ সালে, সিপিডির জরিপে এ বিষয়ে আস্থা রাখার মতো গবেষণাজাত কোনো তথ্য নেই। তেমন তথ্য থাকলে বিষয়গুলো থেকে কর্তৃপক্ষের উত্তরণে পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হতো।

রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর রাজনৈতিক পরিবেশকে বিশৃঙ্খল করার পেছনে সরকারবিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ভূমিকার বিষয়ে জরিপে স্পষ্ট কিছু নেই। দলগুলোর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ায় জরিপের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।

সিপিডির জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ শতাংশ ব্যবসায়ী অর্থ পাচারকে ব্যবসার উন্নয়নে বড় চ্যালেঞ্জ বলেছেন। দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ করতে আওয়ামী লীগের সরকার পাচার রোধ ও বন্ধের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছে। আইনগুলো আরো কঠোরভাবে প্রয়োগের দাবি আমরা জানাই। আমরা কিছুতেই চাই না, দেশের উপার্জিত টাকা অন্য দেশে পাচার, ব্যবহৃত হোক। যে কোনো ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের যে শূন্য সহনশীল (জিরো টলারেন্স) অবস্থান, অর্থ পাচারের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। দুর্নীতি প্রতিরোধে বর্তমান সরকারের দৃঢ় অবস্থান নীতি অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে দুর্নীতির মূলোৎপাটন শুধু সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়।

আইনের কঠোরতম প্রয়োগের মাধ্যমে চাইলেও কোনো দেশের পক্ষে অর্থ পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। পাচার যেসব দেশে হচ্ছে, সেসব দেশ সমান উদ্যোগী না হলে তা বন্ধ করা অনেক কঠিন। গন্তব্য দেশগুলো ভূমিকা না রাখলে কোনো দেশের মুদ্রা পাচার বন্ধ হবে না। কারণ, অর্থ পাচার নিঃসন্দেহে দ্বিপক্ষীয় কার্যক্রম। দুঃখজনক হলেও সত্য, ইউরোপ-আমেরিকায় আমাদের অনেক বন্ধু রাষ্ট্র পাচারকৃত মুদ্রাকে তাদের দেশে স্বাগত ও অভ্যর্থনা জানায়।

দুর্নীতি ব্যবসার অন্তরায়, উন্নয়নের পথে বাধা। ব্যবসা-বাণিজ্য খাতসহ দেশের সর্বস্তরে সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করব, এক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। সিপিডির জরিপে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো কতোটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখতে পারে। আমাদের দাবি, আরো স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শেয়ার করুন