বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠল আজ। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলবে মেলা। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী আয়োজিত মেলাটির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে বাঙালির ‘প্রাণের মেলা’র ৩৯তম আসর শুরু হলো।
‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্লোগানে মাসব্যাপী এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মহামারি শুরুর পর এবারই ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন বইমেলা শুরু হয়েছে।
অতীতের অপ্রীতিকর ঘটনা মাথায় রেখেই এবারের বইমেলায় যে কোনো অপতৎপরতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পোশাকে ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য ছাড়াও মেলার নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মেলা প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।
ডিএমপি জানায়, মেলাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি শহীদ মিনার ও শাহবাগ-নীলক্ষেত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে তল্লাশি দল থাকবে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তারা তল্লাশি করবেন।
মূল মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। এ ছাড়া, কাউকে সন্দেহ হলে তাকে পৃথক কক্ষে নিয়ে তল্লাশি করা হবে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আলাদা গেট থাকবে, যাতে বের হওয়ার সময় শ্লীলতাহানি কিংবা ধাক্কাধাক্কির ঘটনা না ঘটে।
মেলা প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। মেলায় স্থাপিত ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি নজরদারি করা হবে। সিসি ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটরিং করার পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ার থেকেও নজরদারি করা হবে। মেলায় সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকধারী সদস্য মোতায়েন থাকবে।
মেলার আশপাশে মোটরসাইকেল ও গাড়ি টহল থাকবে। এ ছাড়া, সিটিটিসি, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। মেলা শুরুর আগে পুরো এলাকা ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মেলায় আগতদের ভ্যানিটি ব্যাগ, ব্যাগপ্যাক, ধারালো অস্ত্র ও দাহ্য পদার্থ না নিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ এলাকায় শুধু পায়ে হেঁটে মেলায় আগতরা চলাচল করতে পারবেন।
টিএসসি দিয়ে যারা প্রবেশ করবেন তারা মূল চত্বরে ও দোয়েল চত্বর দিয়ে যারা প্রবেশ করবেন তারা রাস্তার দুই পাশে এবং ঢাবির জিমনেসিয়ামে গাড়ি পার্ক করবেন। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধসহ পুরো এলাকায় কোনো ভাসমান দোকান ও হকার থাকবে না। ছিনতাই-পকেটমার রোধে পুলিশের ফুট পেট্রোল ও মোবাইল পেট্রোল টিম কাজ করবে।
বইমেলায় আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার এন্ট্রি পয়েন্টগুলোতে বাড়তি ট্রাফিক মোতায়েন থাকবে। কোনো তথ্য সংগ্রহে সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর থাকবে।
কন্ট্রোলরুমে পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে, কেউ সহায়তা চাইলে তাৎক্ষণিক সহায়তা দিতে পুলিশ কর্মকর্তারা প্রস্তুত রয়েছেন। ব্লগার-লেখকরা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে সহায়তা চাইলে তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেবে পুলিশ।
বাংলা একাডেমির পাশাপাশি মেলায় আগত নতুন বই মনিটরিংয়ে লিটল ম্যাগ চত্বরে সিটি এসবি সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। মেলা বন্ধের পরে গভীর রাতে যদি আপত্তিকর বা উসকানিমূলক কোনো বইমেলায় ঢুকানো হয় তাহলে এর দায়-দায়িত্ব ওই স্টলের মালিক ও প্রকাশককে নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পক্ষ থেকে সাইবার মনিটরিং করা হবে। যাতে ভার্চুয়ালি কেউ কোনো গুজব বা উসকানিমূলক তথ্য ছড়াতে না পারে। এমন কিছু পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাইবার জগতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা রয়েছে কি না তাও সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে র্যাব-পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিট।