খ্রিষ্ট্রীয় বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই পৌঁছে দিয়ে বিশ্বদরবারে সক্ষমতার অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তনয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। ২০১০ সাল থেকে উৎসব আয়োজন করে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে সব বই দেয় সরকার। দেশ-বিদেশে বহুল প্রশংসিত সরকারের এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এবারও বছরের প্রথমদিন বই উৎসবের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। যা নিঃসন্দেহে সরকারের মহৎ উদ্যােগ।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অন্যান্য বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন বই বিতরণে তেমন ব্যত্যয় না ঘটলেও এবারের চিত্রটা সন্তোষজনক নয়। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর প্রায় এক মাস এক সপ্তাহ পার হতে চলেছে। অথচ এখনো সব বই পায়নি সারাদেশের অনেক শিক্ষার্থী। বিভিন্ন শ্রেণির এক, বা একাধিক বিষয়ের বই তারা পায়নি। আবার দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই গেলেও বিতরণ সমস্যায় শিক্ষার্থীরা সব বই পায়নি। পাঠ্যবই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি বিবেচনায় আমরা বিষয়টিকে গুরুতর সমস্যা বলে মনে করছি।
বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলেছিলো, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বই পৌঁছাবে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। কেন সম্ভব হয়নি, এ বিষয়ে গাফিলতির দায় ‘এড়াতে’ এনসিটিবি ৩১ জানুয়ারির পর এসে যা বলছে, তা অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। বই পৌঁছানোর আগে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলমান রাখতে গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধানের পরামর্শও এনসিটিবির কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
কোনো শিক্ষার্থী আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তিসহ যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণে ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হতে পারে- এমন পাঠ্যবই প্রণয়ন করছে সরকার। এর আলোকে এবার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই প্রণীত হয়। নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় ওই শ্রেণির পাঠ্যবই প্রণীত হওয়ায় গত বছরের বই দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা শিক্ষকদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো বই না পৌঁছালে ওয়েবসাইট থেকে পড়ানোর জন্য শিক্ষকদেরকে চলতি সপ্তাহে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রতিটি বই দেওয়া আছে। দেশের সব শিক্ষকের জন্য বিষয়টি পালন সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই অবিলম্বে সব শিক্ষার্থীর হাতে এনসিটিবি বই পৌঁছাবে বলে আমরা আশা করি।
যাদের গাফিলতির কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবই পৌঁছানো যায়নি, এবারের বই উৎসব প্রথম দিন পূর্ণতা পায়নি, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। বই না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যে ক্ষতি হবে, তা পুষিয়ে দিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনমনীয় মনোভাবই প্রত্যাশিত। কারণ, শিক্ষাজীবনের এক মাস সময়ও শিক্ষার্থীদের কাছে খুব মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে নতুন সব বই পৌঁছানো নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বই উৎসব শতভাগ সফল হবে- এ প্রত্যাশা আমাদের।