‘তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদেরকে সাধ্যমত সহায়তা করছে বাংলাদেশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদেরকে বাংলাদেশ সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনটা বাংলাদেশ সবসময়ই করে থাকে। এই ভূমিকম্প এতটাই ভয়াবহ সত্যিই সহ্য করার মতো নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। সেটা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। প্রতি ঘরে আলো দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই বিদ্যুৎ প্রতি ঘরে দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি

দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন, ঠিকানাহীন থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, যে কাজ জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, সেটা আমরা সম্পন্ন করব। ৩৫ লাখ মানুষের ঘর এবং জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আরও ৪০ হাজার ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বাইরেও কেউ বাদ পড়ছেন কিনা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যখাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড অতিমারি দক্ষতার সাথে আমরা মোকাবিলা করেছি। অনেক উন্নত দেশ বিনাপয়সায় করোনার ভ্যাকসিন ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করেনি। একমাত্র বাংলাদেশই বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন ও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। এ কারণেই করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে ৫ম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর কৃষিতে গবেষণার ওপর জোর দেই। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি। দেশে এখন ১৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে।

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে সরকার কেন বাধ্য হয়েছে, তার কারণ জাতীয় সংসদে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কারণ জানান।

শেখ হাসিনা জানান, আমদানিকৃত তরল গ্যাসের ব্যবহার, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ, উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে সমন্বয়, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমান সমন্বয়ের জন্য বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম বাড়ানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার দাম কিছুটা বাড়িয়েছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে সরকারপ্রধান জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। জ্বালানি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়, যেমন- বিমা খরচ, ঝুঁকিব্যয়, ব্যাংক সুদ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকা মূল্যমান সমন্বয় করায় সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্যও অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি বাবদ দিয়ে আসছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান কৃষিসেচ মৌসুম, আসন্ন রমজান ও গরমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং রপ্তানিমুখী বিভিন্ন কলকারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য স্পট মার্কেট হতে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে বর্ধিত এ চাহিদা পূরণ করতে হবে। এ কারণে সরকার অন্যান্য ভোক্তা শ্রেণিকে অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খাতসমূহে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য স্পট মার্কেট হতে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া চলমান।

শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপচয় রোধ করার মাধ্যমে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নিয়মিত ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, জরিমানা, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি।

ছয়মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১২ হাজার ৪৫২ মিলিয়ন ডলার

চলতি অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ ছয়মাসে ১২ হাজার ৪৫২ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমানা আলীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৭৭ ও ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৫২ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিট্যান্সের কোনো বিকল্প নেই। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সরকার নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান, বিদ্যমান বাজার সুসংহতকরণ ও সম্প্রসারণের পাশাপাশি বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠান সহজ করা, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রণোদনা দেওয়া, সচেতনতা তৈরি, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, অধিকসংখ্যক গুণগত ও টেকসই মানবসম্পদ প্রেরণসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।

শেয়ার করুন