সংবাদপত্রশিল্প নানা সংকটের মধ্যে আছে। দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা এ শিল্পের সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা দরকার। এ জন্য শুল্ক-কর ছাড় চেয়েছে নিউজ পেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনায় সংবাদপত্রশিল্পের সংকট তুলে ধরে এ সহায়তা চান নোয়াব নেতারা। তারা বলেছেন, সংবাদপত্র সেবামুখী শিল্প হওয়া সত্ত্বেও বাড়তি কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক্-বাজেট আলোচনায় নোয়াবের পক্ষে বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি এ কে আজাদ। আরও বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। এ ছাড়া একই অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরীও নিজেদের দাবি তুলে ধরেন।
নোয়াব বলেছে, সংবাদপত্রের উৎপাদন খরচ বিক্রি মূল্যের কয়েক গুণ বেশি। এই ঘাটতি পূরণ হয় বিজ্ঞাপনের আয়ে। কিন্তু বিজ্ঞাপন ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় এখন উৎপাদন খরচ মিটছে না। এ ছাড়া নিউজপ্রিন্টের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
অনুষ্ঠানে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বর্তমান সংকটে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সংবাদপত্রশিল্প টিকে থাকবে না। ডলারের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে নিউজপ্রিন্ট আমদানি করে পত্রিকা চালানো কঠিন।
নোয়াব জানিয়েছে, সংবাদপত্রের প্রধান কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের ওপর বর্তমানে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এআইটি) রয়েছে। সব মিলিয়ে সার্বিক খরচ (ল্যান্ডেড কস্ট) প্রায় ১২৭ শতাংশ। বর্তমান বাস্তবতায় এ শুল্ক-কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে নোয়াব।
এ ছাড়া সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ এবং কাঁচামালের ওপর অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে অগ্রিম আয়কর দিতে হয় ৯ শতাংশ। অথচ অধিকাংশ সংবাদপত্রের মোট আয়ের ৯ শতাংশ লাভই থাকে না। তাই উৎসে কর ও কাঁচামালের অগ্রিম কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে নোয়াব।
বর্তমানে সংবাদপত্রের করপোরেট করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ। অথচ মুনাফানির্ভর তৈরি পোশাকশিল্পে এ করহার ১০-১২ শতাংশ। তাই সংবাদপত্র শিল্পের করপোরেট করহার ১০-১৫ শতাংশের মধ্যে রাখার দাবি জানানো হয়।
এ ছাড়া ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী কর্মীর আয়ের ওপর প্রযোজ্য আয়কর প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয়। কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশের ৫০ ধারা অনুযায়ী, সরকারিসহ সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিজের আয়কর নিজে দেন। তাই সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে এই ধারা প্রয়োগের দাবি করা হয় নোয়াবের পক্ষ থেকে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, সংবাদপত্রের জন্য সময়টি কঠিন যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই তিনি আশ্বাস দেন, কিছু দাবি বিবেচনার চেষ্টা করা হবে।
প্রাক্-বাজেট আলোচনায় টিভি চ্যানেল মালিকদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিজ্ঞাপন বিলের ওপর উৎসে কর প্রত্যাহার, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক শামসুল হক, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, বাংলাভিশনের চেয়ারম্যান আবদুল হক, সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়েরসহ এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।