ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় জরুরি ত্রাণের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ৮৯০ কোটি টাকার (সাড়ে ৮ কোটি ডলার) প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসে। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) পক্ষ থেকে বলা হয়, লাখো মানুষকে জরুরি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে এ তহবিল মাঠ পর্যায়ের অংশীদারদের কাছে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবাদাতা খাতের বিভিন্ন অংশীদার। এ ছাড়া খাদ্য, আশ্রয় এবং জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবায় এ তহবিল ব্যয় হবে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর সঙ্গে বৃহস্পতিবার টেলিফোনে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তার ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘তুরস্ককে সাহায্য করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় যোগ দিতে পেরে আমরা গর্বিত। এর আগে তুরস্কও নানা মানবিক কাজে বিশ্বের অন্য দেশকে সহযোগিতা করেছে।’ খবর এএফপির।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে তুরস্কে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে, যারা হেলিকপ্টারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে সেখানে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ধারকারী দল ক্ষতিগ্রস্ত আদিয়াম্মান এলাকায় কাজ করছে। সেখানে কেউ এখনো বেঁচে আছে কি না, তা শনাক্তে কুকুর, ক্যামেরা ও নানা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া জরুরি পরিবহন সহযোগিতা হিসেবে হেলিকপ্টার সহায়তা দিচ্ছে। তুরস্ক ছাড়াও সিরিয়ায় সহযোগীদের মাধ্যমে সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তুরস্ক ও সিরিয়ায় দ্রুত সহায়তা পাঠায়। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ভূমিকম্পের পরপরই সহায়তার হাত বাড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ১৯টি দেশ থেকে ২৭টি উদ্ধার ও অনুসন্ধান দল গঠন করে পাঠানো হয়। এ দলে ১ হাজার ১৫০ জন সদস্য ও ৭০টি কুকুর পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মানবিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সহায়তা পাঠানো হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার তুরস্কে পৌঁছে যায় চীনের উদ্ধারকারী দল। এ ছাড়া চীনের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৬২ কোটি টাকা (৫৯ মিলিয়ন ডলার) পাঠানো হয়। দেশটির পাঠানো উদ্ধারকারী দলে চিকিৎসকও রয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে সিরিয়াতেও সহায়তা পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, তার দেশ থেকে ৭৭ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞ নানা যন্ত্রপাতি নিয়ে তুরস্কের গাজিয়ানতেপে কাজ করছেন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টর সঙ্গে ফোনেও কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘সিরিয়ার অবস্থা নিয়ে তিনি উদ্বেগে রয়েছেন। সেখানেও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’ তুরস্ক ও সিরিয়ায় জরুরি উদ্ধারকাজে সাড়া দেওয়া আরেকটি দেশ হচ্ছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দেশেই উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সিরিয়ায় ৩০০ সেনা উদ্ধারকাজে সহায়তা করছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘের দল মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে বাংলাদেশ, ভারত, ইউক্রেন, জার্মানি, গ্রিস, ইসরায়েল, ইরান, জাপান, নরওয়ে, স্পেনের মতো দেশও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তুরস্ককে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও। তুরস্কে ১০ হাজার ভ্রাম্যমাণ বাড়ি পাঠাচ্ছে কাতার। এ ছাড়া একটি ফিল্ড হাসপাতালের সরঞ্জাম এবং মানবিক সহায়তাও পাঠাচ্ছে কাতার। মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন।