বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রপতি পদে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। এ বিষয়ে আজই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশন জানায়, ১২ ফেব্রুয়ারি দাখিল করা মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর, মাত্র একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকায় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ১৯৯১-এর ধারা ৭ অনুসারে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে রাষ্ট্রপতি পদে দলের হয়ে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাকে নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরে যান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে মনোনয়ন ফরম জমা দেন তারা। তা যাচাই-বাছাই শেষে সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ফলে তিনিই হলেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সাহাবুদ্দিন একাধারে আইনজীবী, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও বিচারক ছিলেন।

৭৫’র পরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় ২০ আগস্ট সামরিক আইনের ৭ ধারায় আটক হয়ে প্রায় তিন বছর কারাগারের কাটিয়েছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।

তার জন্ম ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায়। তার বাবা মরহুম শরফুদ্দীন আনসারী এবং মা মোসাম্মৎ খায়রুন্নেছা।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। ছাত্রাবস্থায় ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের পাবনা জেলার নেতা হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারীদের অন্যতম মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পাবনা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ১৯৯৫ সালে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। কর্মজীবনে তিনি সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যাপকও ছিলেন তিনি।

অধুনালুপ্ত বাংলার বাণী পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এছাড়া প্রেষণে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। তখন সরকারের কাছে এ বিষয়ে ১৩৯৭ পৃষ্ঠার রিপোর্ট পেশ করেছিলেন তিনি।

তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের যুগ্ম সচিব থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তাদের একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

শেয়ার করুন