উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি যতই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই পরিবেশগত সমস্যাগুলো জটিল আকার ধারণ করছে। সম্প্রতি বায়ুদূষণের মাত্রা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, দূষণের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি শহর সামনের সারিতে রয়েছে। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বায়ুদূষণ ঠেকাতে চীনের সম্প্রতি অগ্রগতি বহু মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষা হতে পারে।
২০০৮ সালে অলিম্পিক আয়োজনের আগে বেইজিং বিষাক্ত ধোঁয়ায় এতটাই আচ্ছন্ন ছিল যে ক্রীড়াবিদদের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য কারখানা বন্ধ করতে ও রাস্তাগুলো খালি করতে বাধ্য হয়েছিল। পরবর্তীতে বেইজিং তিয়ানজিনসহ ২৬টি সংলগ্ন বিস্তৃত এলাকায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এই উদ্যোগ দেশটিতে বায়ুদূষণ ঠেকাতে অনেক বেশি টেকসই অগ্রগতি নিয়ে এসেছে। ২০২১ সালে বেইজিংয়ে ‘বিপজ্জনক’ অতিক্ষুদ্র কণার ২ দশমিক ৫ গড় ঘনত্ব ২০১৫ সালের তুলনায় অর্ধেকে চলে আসে।
চীনের এই উদ্যোগ কেবল অনুপ্রেরণাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি অন্যন্য মডেলও। এই অঞ্চলে বিশ্বের দশটি সবচেয়ে দূষিত শহরের মধ্যে ৯টিই রয়েছে। এসব শহরের নাগরিকদের জন্য যা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে বায়ুদূষণে বছরে ২০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৯ সালে দূষণ-সম্পর্কিত অসুস্থতা বা মৃত্যুর কারণে শুধু ভারতেই খরচ হয়েছে ২৭ বিলিয়ন বা জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের নতুন বিশ্লেষণ পরামর্শ দিচ্ছে ছোট পরিসরে হলেও উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বেইজিং এর আগে যেটি নিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোকে দম বন্ধ করে দেওয়ার মতো বিষাক্ত বাদামি ধোঁয়া স্থানীয় গাড়ি ও বর্জ্যের ডাম্প থেকে নয় বরং ইটভাটা, খড় পোড়ানো এবং অন্যান্য দূষণের উৎস থেকে আসে।
এই দূষণ কমানোর সর্বোত্তম উপায়, যেমন চীন দেখিয়েছে, দূষণের মডেল করা, ডেটা ভাগ করা এবং ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়া বিশাল বিস্তৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা। তবে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকর সমাধান, যেমন ইট-ভাটা নিয়ন্ত্রণ, পাওয়ার স্টেশন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। বিশ্ব ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার এই এয়ারশেডের ৬টি চিত্র এঁকেছে। বিশেষ করে বিশাল এলাকা, রাজ্য এবং পৌরসভা সংলগ্ন ছয়টির মধ্যে চারটি জাতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে। এসবের একটি পূর্ব ইরান থেকে পশ্চিম আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত। আরেকটি উত্তর ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বলা চলে, দূষণের কোনো সীমানা প্রাচীর নেই।
ভারত ও পাকিস্তান একত্রে কাজ করবে, এটি কল্পনা করা সহজ নয়, ঠিক তেমনি আফগানিস্তান ও ইরানের শাসকদের কথা বলাও সহজ নয়। যদিও তথ্য আদান-প্রদান করা এবং বায়ুবাহিত কণার ঘনত্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা অতি জরুরি।
ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম সংহতিপূর্ণ এবংবিভক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের বিতর্কিত সীমানাজুড়ে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন মেঘকে ‘পরিবেশগত সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই ধারণার পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক। দক্ষিণ এশীয় সরকারগুলো অন্যথায় ক্রমবর্ধমান দূষণের কারণে বিশাল অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না। দু’শো কোটি জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের টেকসই এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দক্ষিণ এশীয় সীমান্ত অতিক্রমকারী জলপথগুলোকে নতুনভাবে পরিবর্তিত করছে যার ফলে উভয়দিকে ভয়াবহ খরা এবং বন্যার শঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের সংকটের জন্য প্রস্তুত হতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে অবশ্যই পরষ্পরকে সহযোগিতা করতে হবে। শুধু তাই নয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের সুযোগও রয়েছে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট