বাঙালিদেরকে চিরদিনের জন্য পদানত করার জন্যই বাঙালিদের ওপর উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাঙালির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে চিরতরে ধ্বংসের মাধ্যমে তাদেরকে পদানত করে রাখার দুরভিসন্ধিমূলক ছক এঁকেছিল তদানিন্তন সরকার। আর এজন্য উর্দু সমগ্র পাকিস্তানের মাত্র দুই শতাংশ মানুষের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও তারা বাঙালিদের ওপর উর্দুকেই চাপিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, একুশের চেতনা হলো অবিনাশী চেতনা। একুশের অন্যতম চেতনা হলো, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা। আজকে আমরা অনেকেই মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলি কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমাদের অনেকের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার চরিত্র লুকিয়ে আছে। এটি থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হলো রাষ্ট্রের কার্যক্রম থেকে ধর্মকে আলাদা রাখা, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো আমরা এটিকে এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
তিনি বলেন, সর্বত্র মাতৃভাষাকে ব্যবহার করে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের বর্তমান যে আন্দোলন, সেটি হলো- সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা। আমি অত্যন্ত আনন্দিত এইজন্য যে, আমাদের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে বাংলা ভাষার ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমি মনে করি, এটি দ্রুতই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। আর এটি হলেই আমাদের নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়াতে পারবো।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমাদের বুঝতে হবে- পৃথিবীতে একটি মাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র আছে, যে রাষ্ট্রের মানুষেরা বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং যার রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এই দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুর সময়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সরকারি নথিতে ইংরেজি লেখা যাবে না এবং সেটি প্রায় উঠে গিয়েছিল, পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসার পর ইংরেজির ব্যবহার বেড়ে যায়। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর থেকে সর্বত্র বাংলা ব্যবহার আবার ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলেই ভাষার জন্য যারা আত্মত্যাগ করে গেছেন তাদের প্রতি আমরা যথার্থ সম্মান ও কৃতজ্ঞতা সঠিক অর্থে প্রদর্শন করতে পারবো।