তুষারঝড়ে বিধ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) উচ্চগতির বাতাস এবং ভারী তুষারসহ যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলীয় সমভূমি ও মধ্য-পশ্চিমে আঘাত হেনেছে তুষারঝড়। এর ফলে উত্তর আমেরিকার এই দেশটির কয়েকশ স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
একইসঙ্গে মার্কিন বিমান পরিষেবাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি ফ্লাইট। এছাড়া তুষারঝড়ের কারণে কিছু মার্কিন অঞ্চলে সড়কপথে ভ্রমণও কঠিন হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
রয়টার্স বলছে, বুধবার সকালে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মার্কিন নাগরিক শীতকালীন আবহাওয়ার এই পরামর্শের অধীনে ছিল। মূলত ওই তুষারঝড়টি পশ্চিম এবং উত্তর যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত অংশজুড়ে আঘাতের পর পূর্ব দিকে সরে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, বুধবার দিনের বেলা এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিছু জায়গায় ২ ফুট (৬০ সেমি) পর্যন্ত তুষারপাত এবং ঘণ্টায় ৬০ মাইল (৯৭ কিমি) বেগে বাতাস বইতে পারে।
ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, তুষারঝড়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার প্রায় ১ হাজার ৬৪০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও রয়েছে। খারাপ আবহাওয়ার জেরে শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিমানবন্দরগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্থানীয় এয়ারলাইন স্কাইওয়েস্ট ৩৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এই স্কাইওয়েস্ট ইউনাইটেড, ডেল্টা, অ্যামেরিকান, আলাস্কা এয়ারলাইনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে পার্টনারশিপে কাজ করে। তুষারঝড়ের কারণে ওই বিমান সংস্থাগুলোও একের পর এক ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
এছাড়া নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্বে ছেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ফ্লাইট। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা মিনিয়াপোলিস, ডেনভার এবং ডেট্রয়েট বিমানবন্দরের। এই বিমানবন্দরগুলোতে পরিষেবা কার্যত থমকে গেছে। এমনকি ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরে আসা ব্যক্তিরাও আটকে পড়েছেন।
রয়টার্স বলছে, তুষারঝড় সকালের বিমান ভ্রমণে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ার.কম-এর তথ্য অনুযায়ী, মিনিয়াপোলিস থেকে নির্ধারিত বা সেখানে গন্তব্য নির্ধারিত ৪৭০টি ফ্লাইটসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিল হয়েছে।
এছাড়াও টরন্টো বিমানবন্দরের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। শিকাগোর একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। বস্তুত, বুধবারের পর বৃহস্পতিবারের ফ্লাইটগুলোও বাতিল হতে শুরু করেছে। বুধবার বিকেলেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বৃহস্পতিবারের ৪০০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আর তাই সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমে তুষারঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে মিনিয়াপোলিস অন্যতম। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী সেন্ট পলের মেয়র মেলভিন কার্টার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘মিনেসোটার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তুষারঝড়ের একটি হতে পারে এবং সেটির জন্যই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
স্থানীয় কর্মকর্তারা মিনিয়াপলিস এবং প্রতিবেশী সেন্ট পলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং গাড়ি চালকদের রাস্তায় বের না হতে বলা হয়েছে।
এদিকে মিনিয়াপলিসের স্কুল সিস্টেম বলেছে, তারা চলতি সপ্তাহের বাকি অংশের জন্য ২৯ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে দূরবর্তীভাবে ক্লাস করাবে। এছাড়া ডাকোটাস, কলোরাডো এবং ওয়াইমিংয়ে কয়েক ডজন স্কুল তাদের ক্লাস বাতিল করেছে।
রয়টার্স বলছে, গত মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ায় আঘাত হানে তুষারঝড় এবং সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির পর্বতগুলোর জন্য বিরল একটি তুষারঝড় সতর্কতা জারি করা হয়, যা ১৯৮৯ সালের পর জারি করা প্রথম সতর্কতা।