দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কিছু বলবে না। গত বছর জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এমন মন্তব্য করেন। তিনি তখন বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যাপার। তারা নিজের মতো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এরপর প্রায় এক বছর কেটে গেলেও নির্বাচকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যকর আলোচনা, একধরনের সমঝোতা ইসির চোখে ধরা পড়েনি।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশের বড় দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য ‘বিপজ্জনক’ বলে গতকাল বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেন সিইসি। তাঁর আশঙ্কা, ‘বড় কোনো দল জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে ফল নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হবে। নির্বাচন কোন ব্যবস্থাপনায় হবে, এ নিয়ে দুটি দলের অনড় অবস্থান এভাবে অব্যাহত থাকলে ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ থেকে যায়।’ মত ও পথসহ সহযোগী গণমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। অতীতের বিভিন্ন সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে সমঝোতার অভাবের নিরিখে সিইসির বক্তব্য সমর্থনযোগ্য।
তবে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে সরকার ও রাজনীতির মাঠে মূল বিরোধীদলের মধ্যে সমঝোতা আলোচনা এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ইসির চোখে ধরা না পড়লেও এর সুযোগ শেষ হয়ে গেছে বলে আমরা মনে করি না। এখানে স্মরণ করা প্রয়োজন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত সমঝোতা সংলাপের পর। ফলে ওই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়ে ওঠে।
আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে সমঝোতার সুযোগ এখনো আছে। গণতন্ত্র সবসময় সম্মতির বিষয়। আমরা আশা করি, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে সমঝোতা আলোচনা দরকার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যতো ঘনিয়ে আসছে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়, প্রধান দুটি দলের মধ্যে দূরত্ব যেন ততো বাড়ছে। এ পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক যে কোনো দেশের রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। দলীয় স্বার্থের এমন রেষারেষি কোনো দেশকে পিছিয়ে রাখে।
পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে দেশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। এতে ক্ষতি হয় মানুষের। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতির উপর। বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার একটা ধকল সহ্য করছে দেশের অর্থনীতি। এমন পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।
আমরা মনে করি, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। যে কোনো কমিশনের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা সুষ্ঠু নির্বানের বড় উপাদান। আইন অনুযায়ী ইসির সেই ক্ষমতা আছেে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বিশেষ ভূূমিকা রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে আসার সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে বলে আশা সিইসির। আমরাও আশাবাদী হতে চাই, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ছাড় দিয়ে হলেও সমঝোতায় পোঁছাবে রাজনৈতিক দলগুলো।