ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এক বছরে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় (ইউএনজিএ) মস্কোকে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধ বন্ধ করার দাবিতে একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোটাভুটি হয়েছে। এতে ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত ও চীন।
১৪১টি দেশ জাতিসংঘের এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাশিয়াসহ ৭ সদস্য প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। তবে ভারত ও চীনসহ ৩২টি সদস্য এই ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেনি।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ভোটাভুটির পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটির প্রভাব খুব স্পষ্ট। কে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সেটি বোঝা যায়।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি টুইটারে পোস্ট করে বলেছেন, এটি ইউক্রেনের জন্য বিশ্বব্যাপী সমর্থনকে অপ্রতিরোধ্য করার একটি শক্তিশালী সংকেত।
জাতিসংঘের এই আলোচনায় ওঠে আসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক বছর পর, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ রাশিয়ার আগ্রাসনে বিরক্ত, যাকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষকে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে এই যুদ্ধ। শুধু তাই নয় বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানির সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।
গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ সম্পর্কে ইউএনজিএ-র সবশেষ ভোট হয়। এতে ১৪৩টি দেশ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে সংযুক্ত করার জন্য রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিল। ওই অনুষ্ঠানে ৩৫টি দেশ বিরত থাকে এবং রাশিয়াসহ পাঁচটি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দেয়। রাশিয়া ইরিত্রিয়া ও মালির কাছ থেকেও সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবার। এই দুটি দেশ অক্টোবরের ভোটদানে বিরত ছিল। কিন্তু হন্ডুরাস, লেসোথো, থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ সুদান গতবার বিরত থাকার পর এবার এই প্রস্তাবকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
চীন ভোটদানে বিরত থেকেছে। দেশটির কর্মকর্তারা পশ্চিমা দেশের সমালোচনা করে এ সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন। অভিযোগ আছে, তারা ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা ও অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
বেইজিং জোর দিয়ে বলছে সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। তবে তারা বিশ্বাস করে নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করা উচিত এবং ন্যাটো জোটের ওপর রাশিয়ার অস্বস্তি শেয়ার করা উচিত। বুধবার মস্কোতে দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ পায় যখন শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে দেখা করেন এবং পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করেন।
অন্যদিকে, জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কম্বোজ বলেন, ‘ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। সাধারণ মানুষের ওপর হামলা উদ্বেগজনক বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত জাতিসংঘ সনদের নীতিগুলোকে সমর্থন করে। ভারতও আলোচনা ও কূটনৈতিকভাবে যে কোনো সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী। যদিও এই প্রস্তাবে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি সুরক্ষিত করার যে পন্থার কথা বলা হয়েছে, তাতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর সে কারণে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে ভারত।
এদিকে, শুক্রবারও ইউক্রেনের বিষয়ে জাতিসংঘের কাউন্সিলের একটি বৈঠক হওয়ার কথা।
সূত্র: আল-জাজিরা