কারাবিধি অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের অন্তত ১০ ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের আদেশে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে কারা অধিদপ্তর। সেখানে এসব সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
‘কারাগারগুলোতে অবস্থানরত মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিদের তথ্য’ শীর্ষক কারা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে মোট দুই হাজার ১৬২ জন বন্দি রয়েছেন।
গত বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত তৈরি করা এ প্রতিবেদন মতে, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের জন্য সেলের সংখ্যা মোট দুই হাজার ৬৫৭টি। এর মধ্যে পুরুষের জন্য দুই হাজার ৫১২টি। আর নারীদের জন্য ১৪৫টি। মোট দুই হাজার ৬৫৭টি সেলের মধ্যে বন্দি রয়েছে দুই হাজার ১৬২ জন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দির সংখ্যা দুই হাজার ৯৯ জন আর নারী রয়েছেন ৬৩ জন।
প্রতিবেদনের ‘কারাবিধি অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসমূহ’ অংশে যেসব সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-
১. কারা বিধি মোতাবেক নির্ধারিত ডায়েট স্কেল অনুযায়ী খাদ্য দেওয়া।
২. নির্ধারিত পোশাক দেওয়া।
৩. নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া।
৪. কারা বিধি মোতাবেক আত্মীয়-স্বজন ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা।
৫. ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা।
৬. বই-পুস্তক ও পত্রপত্রিকা পড়ার সুযোগ দেওয়া।
৭. ধূমপায়ীদের বিড়ি/সিগারেট দেওয়া।
৮. সেল সংলগ্ন আঙিনায় গোসল ও শরীর চর্চার সুযোগ দেওয়া।
৯. আপিল দায়ের সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদনে ব্যবস্থা গ্রহণ।
১০. সেলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও খাদ্য পরিবেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
এ প্রতিবেদন দাখিলের পর সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামির সেলের ভেতরে কী কী ব্যবস্থাপনা আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। একই সঙ্গে পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ এপ্রিল দিন রেখেছেন বলে জানিয়েছেন রিটকারীদের আইনজীবী শিশির মনির।
২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি। আদালতে রিট আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
পরে দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দি ও কনডেম সেলের সংখ্যাসহ কনডেম সেলের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
রিটের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছিলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়।
প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন।
তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে।
কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়।