শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাতিঘর মোকতাদির চৌধুরীকে অভিনন্দন

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ভারত-বাংলাদেশ কালচারাল কাউন্সিল’ কর্তৃক মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার-২০২৩ (Mahatma Ghandhi International peace Award-2023) পদকে ভূষিত হয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ‘মত ও পথ’ সম্পাদক, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। অভিনন্দন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাতিঘর! আপনার এই বিশাল অর্জনে আমরা ‘মত ও পথ’ পরিবার অত্যন্ত প্রফুল্ল; একইসঙ্গে গর্বিতও। আমরা মনে করি, ‘ভারত-বাংলাদেশ কালচারাল কাউন্সিল’ এই পদকের জন্য একজন যোগ্য মানুষকেই বেছে নিয়েছে।

মোকতাদির চৌধুরী প্রত্যয়দীপ্ত এক ব্যক্তিত্বের চলমান প্রতিকৃতি। জীবনে সংশপ্তক, চিন্তায় প্রমিথিউস—ছাত্ররাজনীতি, আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে স্বাধীনতাত্তোর সকল প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে মুক্তিকামী মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের প্রতিটি বিনির্মাণে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সামনে রেখে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। স্বদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কার-প্রত্যাশা-প্রত্যাখ্যানকে আত্তীকৃত করে তাঁর মানবমুখীন রাজনীতি স্বীয় যোগ্যতায় অর্জন করেছে এক অতুলনীয় মহিমা। সূচিসূক্ষ্ম সংবেদনশীলতা, স্বকীয় জীবনদর্শন, দৃষ্টিভঙ্গির স্বাতন্ত্র্য, ইতিহাসবোধ, ঐতিহ্যানুসন্ধানের আকুলতা, সাধারণ মানুষের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধ, প্রাতিস্বিক বাগভঙ্গি, জীবনধর্মী রাজনৈতিক কর্মতৎতপরতা, জনমানুষের মনোলোকের জটিল রহস্যময়তার বিশ্লেষণে তাঁর চিন্তালোক থেকে প্রতিনিয়ত উৎসারিত হচ্ছে এক নব-নান্দনিকতার সূত্র। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ততোধিক ক্ষিপ্রতায় তা কার্যে পরিণত করার শক্তি তাঁকে একজন সফল মানুষ ও ভালো নেতার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

সারাজীবন প্রগতি ও মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নানা পরিচয়ে বিধৃত—স্বনামধন্য আমলা, স্বচ্ছ রাজনীতিক, সংসদ সদস্য, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, পত্রিকার সম্পাদক, সমাজসেবক, বিদ্যোৎসাহী, সংস্কৃতিসেবী ও মুক্তবুদ্ধির চিন্তক। কোন পরিচয়ের চেয়ে কোন পরিচয় বড়, সেটা নির্ণয় করা খুবই কঠিন। শুচিশুদ্ধ, রুচিঋদ্ধ এ মানুষটি জীবনভর মঙ্গলের, কল্যাণের, মানবিকতার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার এবং শুভবুদ্ধির প্রদীপ জ্বেলে যাচ্ছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল চিনাইরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ডিগ্রি কলেজ, জেলা শহরে মোকতাদির-ফাহিমা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়েছে অন্বেষা বিদ্যাপীঠ। শিক্ষার আলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর নির্বাচনী এলাকার ১২টি বিদ্যালয়হীন গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করেছেন এবং ৩৫ অধিক উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণসহ সেগুলো এমপিওভুক্তি করণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তিনি নিরবে নিবৃত বহু শিক্ষার্থীর পড়ালেখার যাবতীয় খরচ বহন করে যাচ্ছেন। শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় তাঁর অসামান্য অবদানের বর্ণনা ফুটে উঠেছে অনেক কবি সাহিত্যিকের কবিতা ও রচনায়। তিনি দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হিসেবে। এককথায় বলতে গেলে তিনি শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাতিঘর।

শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারে তাঁর অগ্রণী ভূমিকার যথার্থ মূল্যায়ন রাষ্ট্র এখনও করতে পারেনি। আমরা মনে করি, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর মতো একজন অসাম্প্রদায়িক, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবান্ধব মানুষ-ই রাষ্ট্র কর্তৃক সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পাওয়ার অন্যতম দাবিদার। কাজেই রাষ্ট্রের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, রাষ্ট্রীয় পদক প্রদানের ক্ষেত্রে যেন তাঁর মতো যোগ্য মানুষকে বিবেচনায় আনা হয়।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা এবং সিনিয়র সাব-এডিটর, মত ও পথ।

শেয়ার করুন