টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। এর মধ্যে তীব্র শীতের মৌসুমেও রুশ আগ্রাসন বন্ধ থাকেনি। তবে মস্কোর এই আগ্রাসন মোকাবিলা করেই ইউক্রেন টিকে আছে এবং এ কাজে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি ‘খুব কঠিন’ একটি শীতকাল সফলভাবে পারও করেছে।
আর তাই ‘কঠিন’ এই শীত থেকে বেঁচে থাকার জন্য ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশের প্রশংসা করেছেন। যদিও এই শীতকাল নিয়েই ইউক্রেন নিয়ে আশঙ্কা জেগেছিল সবার মনে। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার ‘খুব কঠিন’ শীত থেকে বেঁচে থাকার জন্য তার দেশের প্রশংসা করেছেন। কারণ গত শীতে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ও স্থাপনাগুলো রাশিয়ার নিয়মিত হামলার মুখেই ছিল এবং এতে করে লাখ লাখ মানুষ অন্ধকার এবং ঠান্ডায় নিমজ্জিত হয়েছিলেন।
বুধবার নিজের দৈনিক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এই শীতকালকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এটি খুব কঠিন সময় ছিল এবং প্রতিটি ইউক্রেনীয় এই অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু (বারবার রুশ হামলার পরও) আমরা ইউক্রেনকে জ্বালানি এবং তাপ প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনের জ্বালানি ব্যবস্থাপনার ওপর এখনও (রুশ হামলার) হুমকি রয়েছে।’
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দোনেতস্কের বাখমুত শহর থেকে পিছু হটার ইঙ্গিত দিয়েছে ইউক্রেন। কয়েক মাস ধরে বাখমুতে রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে তীব্র লড়াই হচ্ছে। তবে গত দুই সপ্তাহে রুশ বাহিনীর হামলার তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যে, সেখান থেকে এখন কৌশলগত কারণে পিছু হটার পরিকল্পনা করছে ইউক্রেনের সেনারা।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা আলেক্সান্ডার রোদনেয়ানস্কি বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ইউক্রেনীয় সেনারা সেখান থেকে সরে যাবেন।
বাখমুত শহরটি দোনেতস্কে অবস্থিত। গত বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল অধিগ্রহণ করেন, এর মধ্যে দোনেতস্ক একটি। বর্তমানে দোনেতস্কের অর্ধেক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রুশ সেনাদের হাতে। পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে তাদের অবশ্যই বাখমুত দখল করতে হবে। এরপর দোনেতস্কের অন্য শহরগুলোর দখলও নিতে পারবে তারা।
উল্লেখ্য, রাশিয়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।
মূলত সম্মুখসারির যুদ্ধে ব্যর্থতার পর রাশিয়ার এই ধরনের হামলা একটি বিস্তৃত কৌশলের অংশ এবং শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউক্রেনে রুশ এই কৌশলের প্রভাব আরও তীব্রভাবে অনুভূত হতে শুরু করবে বলেও ধারণা করেছিল মস্কো।
তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে শীত মোকাবিলায় ইউক্রেনকে আরও ১১০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলো।
মূলত ইউক্রেনীয় জ্বালানি গ্রিডের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করার জন্য প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অনুরোধের জবাবে জরুরি শীতকালীন সহায়তা হিসেবে ওই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।