আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ চুুক্তির সংশোধন প্রয়োজন

সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ
ফাইল ছবি

ভারতের আদানি গোষ্ঠীর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে দেশীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ‘না জেনে, না বোঝে করা অসম, অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক’ চুক্তির বিষয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনা ক্রমেই বাড়ছে। চুক্তিটি পুর্নবিবেচনার, এমনকি প্রয়োজনে বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এসব দাবির সঙ্গে ‘রহস্যও’ ঘনীভূত হচ্ছে। শুরু থেকে চুক্তিটি সরকারিভাবে গোপন রাখা হয়। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কেউ কেউ এটি পরে গণমাধ্যমকে জানান। এমন বিতর্কিত চুক্তি দেশের কারা, কেন করলেন, কেন গোপন রাখা হলো- এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা, বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। চুক্তির সঙ্গে জড়িত দুই দেশের শীর্ষপর্যায়ের কেউ মুখ খুলছেন না।

আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে একপেশে চুুক্তির আগে আমাদের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি, এ চুক্তি আমাদের বিদ্যুৎ খাতে কেমন প্রভাব ফেলবে, সেটা যে ধর্তব্যে নেওয়া হয়নি- বিষয়গুলো এখন যথারীতি পরিষ্কার। বিশেষজ্ঞরা চুক্তিটি সম্পর্কে বলছেন, লাভের ভাগ আদানি গোষ্ঠীর আর লোকসানটা বাংলাদেশের জনগণের। এমনকি আদানি গোষ্ঠী কোনো শর্ত না মানলেও বাংলাদেশের জন্য ওই চুক্তি থেকে বের হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।

universel cardiac hospital

আর্ন্তজাতিক কোনো চুক্তি আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণে অসম ও অস্বচ্ছ না হলে তা নিয়ে সমালোচনা হওয়াটা স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক জ্বালানিবিশেষজ্ঞ টিম বাকলি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে বলেন, ‘শেয়ার ও হিসাব জালিয়াতিতে অভিযুক্ত আদানি গোষ্ঠী থেকে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশকে পাঁচ গুণ বেশি দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কিনতে হতে পারে। যা বাংলাদেশের জনগণের টাকায় এশিয়ার সাবেক শীর্ষ ধনীর পকেট ভরার চুক্তি।’ চুক্তিটি বাস্তবায়ন হলে দেশের বিদ্যুৎ খাত ভারতের বিতর্কিত আদানি গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে বলেও কয়েক বিশেষজ্ঞের শঙ্কা।

স্বার্থবিরোধী কঠিন শর্তে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির পদে পদে অসম শর্ত আর তথ্য গোপন করে আদানি গোষ্ঠীর অতিমুনাফার সব আয়োজন সর্বস্তরে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এরপরও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নীরবতা সন্দেহ বাড়াচ্ছে। জনমনের সন্দেহ দূর করতে নীরবতা ভেঙে তাই সংশ্লিষ্ট মহল চুক্তির সঙ্গে জড়িতদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।

চুক্তিটি ঘিরে দেশ-বিদেশে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, এর থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানাই। কাদের স্বার্থে ওই চুক্তি হয়েছিলো, চুুক্তিতে দেশের স্বার্থ কোথায়- জনগণের কাছে কমিটি যেন এসব বিষয়ের ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারে। কারণ, চুক্তিটি নিয়ে সময় থাকতে কোনো সমঝোতা না হলে আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনাটা দেশের জন্য গলার কাঁটা হবে না, এ নিশ্চয়তা বিশেষজ্ঞরা কিছুতেই পাচ্ছেন না।

আমরা মনে করি, চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা দেশের জনগণের বহনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে চুক্তির শর্তগুলো পুঙ্খানুপঙ্খ বিচার–বিশ্লেষণ করা দরকার। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন প্রয়োজন। জাতীয় স্বার্থে সেটা জরুরি। আশার কথা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য কয়লা আমদানিতে সরকারি-বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সই করা বিদ্যমান চুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করতে নয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটির নেতৃত্বে আছেন বিদ্যুৎ সচিব। বিদ্যুৎ বিভাগ তা অবহিত করে উচ্চ পর্যায়ের এ কমিটির বিষয়ে অভ্যন্তরীণ অফিস আদেশ জারি করেছে।

আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ আনতে গেলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে আলোচনায় এলে পর্যালোচনা কমিটি গঠিত হয়। কমিটির শর্তাবলিতে উল্লেখ আছে যে, এটি প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য আইপিপিগুলোর সঙ্গে কয়লা সরবরাহ চুক্তি (সিএসএ) এবং বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) কয়লা মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে এবং কয়লা মূল্য সূচকও কয়লা সরবরাহকারী দেশ পর্যালোচনা করবে। কমিটির কার্যক্রম চলুক দ্রুত গতিতে।

শেয়ার করুন