বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, ২ মার্চ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন কিংবা ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা একক কারো কৃতিত্ব নয়, এটি ছিল ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের কৃতিত্ব। আমরা যেমন বলি, জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। তেমনিভাবে শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী মাত্র। এটিই হলো সত্য। এই সত্যকে পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ নেই।
৬ মার্চ সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ আয়োজিত জয় বাংলা কনসার্টে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, মার্চ বাঙালির একান্ত মাস। বাঙালির জীবনে মার্চ এক অনন্য সাধারণ স্থান দখল করে আছে। এই মার্চ মাসের কোনো তারিখকেই বাঙালির জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান যখন জাতীয় পরিষদের সভা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিলেন, সাথে সাথেই গর্জে উঠে সমগ্র বাংলাদেশ। তখন মিছিলে মিছিলে শ্লোগান উঠেছিল, ইয়াহিয়ার ঘোষণা মানি না মানি না। পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা। বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। সেসময় আমরাও সৌভাগ্য হয়েছিল একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার, যে মিছিলটি বেগম মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে আসা মিছিলের সাথে একাকার হয়ে আরেকটি বিশাল মিছিলে পরিণত হয়েছিল।
বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হলো- ইয়াহিয়ার ঘোষণার প্রতিবাদে ২ মার্চ কলাভবন চত্তরে ছাত্রজনতার সমাবেশ হবে। কলাভবনের চত্বরের সেই সভা সম্পর্কে দীর্ঘ ৫২ বছর পর গত পড়শু(২ মার্চ) একটি পত্রিকায় আ স ম রবের একটি লেখা আমি পড়ছিলাম। এই প্রসঙ্গটি এই জন্য যে, এই প্রথমবারের মতো আ স ম রব স্বীকার করলেন- সেদিন যে পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল, সেই পতাকাটি ছিল ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে উত্তোলন। এটি কোনো একক ব্যক্তির পক্ষ থেকে নয়। সেখানে মঞ্চে ছিলেন ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের নেতা আ স ম রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, আব্দুল কুদ্দুছ মাখন, শাহজাহান সিরাজ এবং সৌভাগ্যবশত তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমারও ঐ মঞ্চে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকতাদির চৌধুরী বলেন, সেখানে যে পতাকাটি এসেছিল, সেই পতাকাটির ইতিহাস অকস্মাৎ নয়। এই পতাকাটির একটি ইতিহাস আছে। এই পতাকাটির নাম হলো সার্জেন্ট জহুর রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগ। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরকে ক্যান্টনমেন্টের কারাগারে হত্যা করা হয়েছিল। তার সম্মানে সার্জেন্ট জহুর বাহিনী নামে ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি বাহিনী গঠিত হয়েছিল। সেই সার্জেন্ট জহুর বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি পতাকা তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকে রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগ হিসেবে মার্চ পার্স করে দেওয়া হয়েছিল পল্টন ময়দানে।
তিনি বলেন, জহুর রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগটি ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্চ পার্স করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে হাটু ঘেরে (যেভাবে একজন সৈনিক তার সেনাপতির কাছে রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগ দেয়, সেইভাবে) তুলে দিয়েছিলেন যিনি, তিনি ছিলেন শেখ কামাল। সেই রেজিমেন্টাল ফ্ল্যাগটি ২মার্চ কলাভবনের চত্বরে এসেছিল এবং সেটিকে বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে গ্রহণ করে উত্তোলন করা হয়েছিল। কিন্তু তখনও এটি বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়েছে ৩মার্চ।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্র-শ্রমিক সমাবেশ ডাকা হয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন; তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি ও আব্দুর রাজ্জাক। ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেই সভায় সমস্ত ছাত্র ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করে শোনানো হয়।