আন্তর্জাতিক নারী দিবস: অনলাইনে সহিংসতার শিকার ৬৪% নারী

মত ও পথ রিপোর্ট

আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। জাতিসংঘ ২০২৩ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’। তবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে বেড়েছে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা। অশ্লীল, যৌন হয়রানিমূলক বার্তা ও ছবি পাঠানো, ভুয়া আইডি তৈরি ইত্যাদি নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা।

একশনএইডের ‘বাংলাদেশে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনলাইনে প্রায় ৬৪ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে হারটি ১৪ শতাংশ বেশি। নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইনে বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম মেসেঞ্জারে।

universel cardiac hospital

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সহিংসতার ঘটনাগুলো নারীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে। সহিংসতার শিকার ৬৫ শতাংশ নারী হতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগছেন। তবে ‘অভিযোগ করে লাভ নেই’—এ মনোভাব থেকে ৮৫ শতাংশ নারী প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেন না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক নারী সচেতন নন।

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র—প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী নির্যাতন হচ্ছে। এসব নির্যাতনের প্রকাশ ঘটছে নানাভাবে। প্রযুক্তির যুগে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। বিশেষ করে কিশোরী ও ১৮ বছরের নিচের বয়সী মেয়েশিশুরা সহিংসতার বেশি শিকার হচ্ছে।

অনলাইনে নারীর প্রতি ১২ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে

একশনএইডের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে নারীর প্রতি ১২ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীরা অশ্লীল, ক্ষতিকর, যৌনতামূলক ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য পেয়ে থাকেন। ৫৩ শতাংশ নারীকে ইনবক্সে অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে যৌন সম্পর্ক করার কথা বলে হয়রানি করা হয়। বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন ১৯ শতাংশ নারী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের নাম ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খোলার মাধ্যমে সহিংসতার শিকার হয়েছেন প্রায় ১৮ শতাংশ নারী। ১৬ শতাংশ নারী বলেছেন, সাইবার জগতে তাঁদের কর্মকাণ্ড সব সময় অনুসরণ করা হচ্ছে। সমকামিতার পক্ষে কথা বলায় ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৩ শতাংশ।

এ ছাড়া অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া (পোস্ট), যৌন সহিংসতা করার হুমকি, ফেসবুক লাইভ বা শিক্ষামূলক অধিবেশন চলার সময়ে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য, কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলার চাপ, যৌন সহিংসতা ঘটানোর সময় ছবি তুলে ও ভিডিও করে পরে পোস্ট করা এবং নাটক–সিনেমায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হয়েছে নারীদের সঙ্গে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন নারীরা, এ হার ৪৭ শতাংশ। মেসেঞ্জারে হারটি ৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া ইনস্টাগ্রাম, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউবসহ অন্যান্য মাধ্যমেও সহিংসতার মুখে পড়েছেন নারীরা।

প্রতিকার পান না, আত্মবিশ্বাস কমছে

২০২১ ও ২০২২—দুই বছরের জরিপেই একশনএইড দেখেছে, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানানোর হার খুবই কম, মাত্র ১৫ শতাংশ। ওই দুই বছর যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা অভিযোগ করার জন্য ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম বেশি বেছে নিয়েছেন। এ বছর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের ফেসবুক পেজে ২০ শতাংশ এবং জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ১৫ শতাংশ অভিযোগ করেছেন। সশরীর গিয়ে অভিযোগ করার আগ্রহ কম।

অভিযোগ না করার কারণ হিসেবে প্রতিকার না পাওয়া; অভিযোগ করেও কাজ হবে না এ ধারণা; অভিযোগ করার পর পরিণতি কী হয়, তা নিয়ে ভয়; সামাজিক সংস্কার এবং অভিযোগকারীকেই উল্টো দোষারোপ করার প্রবণতার কথা বলেছেন নারীরা। যেমন অভিযোগ করেছিলেন, এমন নারীদের ৬৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতিকার পাননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনা নারীর জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। প্রায় ৪২ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তাঁরা অনলাইনে সক্রিয়া থাকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করার বিষয়ে আর আস্থা পান না।

শেয়ার করুন