আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। জাতিসংঘ ২০২৩ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ আমরা মনে করি, এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস সীমিত থাকে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং ২০৪১ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চারটি ভিত্তি- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে, যা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করেন। তিনি জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকারের বিষয়টি সংবিধানে নিশ্চিত করেন। স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন হচ্ছে, লিঙ্গবৈষম্য কমিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে থাকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ। নারীর দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ভিজিডি কর্মসূচি, দরিদ্র মার জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি, মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ এবং ক্ষুদ্রঋণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য অর্জিত হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ পুরস্কার। নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে আমরা অর্জন করেছি জাতিসংঘ কর্তৃক ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ অ্যাওয়ার্ড। শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ এবং গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ লাভ করেছি। দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা ও সবার জন্যে শান্তি-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করায় ২০২১ সালে অর্জিত হয়েছে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’। আমরা মনে করি, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এসব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পরও নারীর অগ্রযাত্রায় এখনও রয়েছে বিশাল চ্যালেঞ্জও।
অনেক জায়গায়ই এখনও নারীর কাজের মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। অর্থনীতিতে নারীর অবদানের স্বীকৃতিও মিলছে না। ধর্ষণ এবং হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। আগের তুলনায় নির্যাতনের ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়লেও বন্ধ হয়নি। একইসঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে নারীর প্রতি অনলাইন সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। অনলাইনে অশ্লীল, যৌন হয়রানিমূলক বার্তা ও ছবি পাঠানো, ভুয়া আইডি তৈরির মাধ্যমে সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমের মাধ্যমে সামনে আসছে। অনলাইন সহিংসতার ফলে মানসিক আঘাত, হতাশা, উদ্বেগ, ট্রমার শিকার হচ্ছেন নারীরা। নারীকে অনলাইন সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে না পারলে নারী ক্ষমতায়ন বা সমতা অর্জনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব হবে না এবং টেকসই উন্নয়নও নিশ্চিত করা যাবে না। কাজেই আমরা আশা করব, নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন, সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে নারীর প্রতি সবধরনের সহিংসতা রোধে সরকার আরও মনোযোগী হবে।