বাড়িঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট হয়েছে। কিছু জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। আর বাকি আসবাবপত্রসহ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে পরনের কাপড় থেকে শুরু করে মাথা গোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত হারিয়েছেন পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা। ঘটনার আট দিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় এই মানুষেরা সহায়তা পেয়েছেন সামান্যই।
গত ৩ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে করা বিক্ষোভ থেকে পঞ্চগড় শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর ও শালশিড়ি এলাকায় দেড় শতাধিক বাড়িঘরে হামলা হয়। আহমদিয়ারা ওই দিন দুপুরে বাড়িঘরে তালা দিয়ে জলসায় ছিলেন। এ সুযোগে বিকেল থেকেই দুষ্কৃতকারীরা প্রথমে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালান। লুট করে নিয়ে যান সর্বস্ব। পরে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে চলে যান। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হওয়ায় ঘটনার আট দিন পেরিয়ে গেলেও ঘরে ফিরতে পারছেন না তারা। এমনকি আতঙ্কও কাটেনি তাদের।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রধান করে গঠন করা পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৯২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সেই তালিকা ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আহমদিয়ারা চাইলেই তাদের পুনর্বাসনসহ সার্বিক সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার পর ৬ মার্চ রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম সুজন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ১৭৯টি পরিবারের মাঝে একটি করে শাড়ি, লুঙ্গি, কম্বল ও ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ এক হাজার করে টাকা তুলে দেন। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কম্বল ও চাল আর মন্ত্রীর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে শাড়ি-লুঙ্গি ও নগদ টাকা দেওয়া হয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, তারা ত্রাণ নয়; উপহার হিসেবেই এসব গ্রহণ করেছেন।
আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে পঞ্চগড় জেলা শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর-ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় রংমিস্ত্রি মো. কামরুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। দাঁড়িয়ে আছে সিমেন্টের খুঁটিগুলো। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পুড়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা টিন। উঠানের কোনায় বিবর্ণ হয়ে যাওয়া কাঁঠালগাছটিতে বসে আছে একঝাঁক কবুতর। হাতে একমুঠো শর্ষেদানা নিয়ে শেষ সম্বল কবুতরগুলোকে ডাকছেন কামরুজ্জামান।